মো. তাসলিম উদ্দিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সরাইল
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী নালা খাল বিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বহন করে এলাকার বর্ষার মৌসুমে। খাল নদী নালা নিয়ে কত কবিতা বই পড়েছি। সরাইল উপজেলা চারদিকে মেঘনাও তিতাস নদীর সাথে সংযুক্ত হয়ে। খালগুলি গ্রাম অঞ্চলের পানি সরবরাহ ও খাল বিলে দেশি প্রজাতির মাছের অটাল ছিল। ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে ছোট ছোট জাল দিয়ে মানুষ মাছ মারতো। বিভিন্নতা খাল শুকিয়ে গেছে এখন আর সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে মানুষের। হারিয়েছে সরাইল প্রকৃতির সৌন্দর্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ খাল গুলো দখল ও বরাট হয়ে যাওয়ায় এই এলাকায় পরিবেশ চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জানা যায়, এই উপজেলা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শাখা খালই দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা জবর দখল করে খালের উপর দোকান-পাট নির্মাণ করায় খাল গুলোর অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে এ খাল গুলোতে ময়লা পানি জমে খালের পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অপর দিকে বর্ষা মৌসুমে এই সরাইল এলাকায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে মানুষের বাড়ি ঘর ও ফলের বাগান এবং কৃষি জমির ফসলহানি ঘটছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সরাইল পশ্চিম বাজার দিয়ে প্রবাহিত খালের শাখা খালটি পশ্চিম দিকে সৈয়দ টুলা হয়ে সদর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের পানি এই শাখা খাল হয়ে জাফর খাল দিয়ে মেঘনায় চলে যেতো। দীর্ঘ তিন যুগেও এই খালটি খনন না করায় পলি জমে খালটি এখন অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। বড্ডাপাড়া হতে এই খালের নিজ সরাইল দোকান তুলে ও বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি খালটিকে তিলে তিলে গিলে খাচ্ছে। এ খালটি ভরাট এবং সংস্কারের অভাবে গরু হাটা থেকে বড়দেওয়ান পর্যন্ত জায়গায় সামান্য বৃষ্টি হলে হাটু পরিমান পানি জমে যায়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের দৌরাত্মে দিন দিন খালটি সমতলে পরিনত হচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে যে এইসব শাখা খালের কোন কোন জায়গায় রাস্তা করে যাতায়াতের পথ করে ফেলেছে। পানিশ্বর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর সঙ্গে অনেক খাল রয়েছে। যা ছবিতে দেওয়া হল। এদিকে খনন না করায় লাহোর নদী হারিয়েছে নাব্যতা। ফলে কৃষি জমিতে সেচের কাজ ব্যহত হচ্ছে। এবার যদি একটু বড্ডাপাড়া হতে তের কান্দা খালের দিকে তাকাই, সেখানেতো আরো করুন অবস্থা। সকাল বাজার এলাকায় বেপারী বাড়ি পাশে যে খাল ছিল তা এখন শুধু কল্পনাতে আছে বাস্তবে নাই। সরাইল- লাখাই রোডের পশ্চিম পাশের খালের পশ্চিমে যাদের জমি তারা স্বেচ্চাচারীভাবে কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়া সরকারী খাল দখল করে দোকান-পাট ও তাদের চলাচলের পথ বানিয়ে ফেলেছে। যার ফলে ঐ এলাকায় সামান্য বৃষ্টি বা কোন নির্মাণ কাজের পানি পড়লেই জলাবদ্ধতা হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হল কার আদেশে এবং কাদের ইশারায় বিনা অনুমতিতে সরকারী খাল গুলো ভরাট করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে? যখন ভরাট করা হয় তখন কি সরাইলে কোন কর্তৃপক্ষ ছিল না? নাকি থেকেও নিরব ভূমিকা পালন করেছে?অপরদিকে বড্ডাপাড়া খালটিতে বিভিন্ন প্রভাবশালীরা অসংখ্য বাধ ও ছোট ছোট কালভার্ট দিয়ে খালটির অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়েছে। ফলে এই খাল দিয়ে এখন আর পানি প্রবাহ হয়না বললেই চলে। অথচ এক সময় এই খাল গুলো দিয়ে বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি অপসারণ হতো। দূর হতো জলাবদ্ধতা। খাল জবর দখল ও খননের ব্যাপারে জানতে চাইলে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসাইনএ প্রতিনিধিকে বলেন, প্রধান প্রধান কয়েকটি খাল খননের বিষয়ে সমন্বয় সবাই উপস্থাপন করেছি“খালের বিষয়টি ইউএনও অফিসের আওতাধীন না, এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে একটি অবৈধ দখলদারদের তালিকা থাকতে পারে, তারা যদি অবৈধ দখল উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন সাহায্য চায় তাহলে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে সহায়তা করব”। সর্বোপরি সরাইল উপজেলা বাজারসহ আশে পাশের এলাকাগুলোর সকল মানুষের প্রাণের দাবী শীঘ্রই সরাইল প্রধান খাল গুলো পুনরুদ্ধার ও খনন কাজ করে পানির প্রবাহ গতিময় করে এ অঞ্চলকে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের একান্ত সুদৃষ্টি কামনা করি।