রবিউল ইসলাম শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
সহ অন্যান্য এলাকায় নিত্যপণ্য এবং ওষুধের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সংসার চালাতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। এই ব্যয়ের চাপ সামলাতে তারা বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন, কেউ কেউ আবার সুদের কারবারিদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া গ্রামের আব্দুস সামাদ,ছয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়, তাতে সংসার চালানোই এখন কঠিন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এনজিও ঋণের কিস্তির বোঝা। তিনি জানান, একটি এনজিওর ঋণ পরিশোধ শেষ হওয়ার আগেই সংসারের খরচ মেটাতে সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছেন। উপজেলার শতাধিক পেশাজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় যে আয় দিয়ে কোনোমতে সংসার চলত, সেই আয় এখন আর যথেষ্ট নয়। নিত্যপণ্যের খরচের সঙ্গে যোগ হয়েছে ওষুধের পেছনে মোটা অঙ্কের ব্যয়, সড়ানোর পড়াশোনা ও বাসাভাড়ার চাপ। ইজি বাইক চালক রফিকুল ইসলাম জানান, আগে বিশেষ প্রয়োজনে ঋণ নিলেও এখন মাসের খরচ মেটাতেই ঋণ নিতে হচ্ছে। কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খেয়ে অনেকে সুদের কারবারিদের ফাঁদে পড়ায় ঋণের বোঝা কেবল বেড়েই চলেছে।
মুদি দোকানিদের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে মসুর ডাল, বোতলজাত সয়াবিন তেল, প্যাকেটজাত আটা, শিশুখাদ্য গুঁড়ো দুধসহ সাবান, শ্যাম্পু ও টুথপেস্টের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে চায়না রসুন এবং আদার দামও অনুরূপভাবে বেড়েছে। শাকসবজির বাজার গত কয়েক মাস ধরে অস্থিতিশীল, যেখানে শিমের কেজি ১০০ টাকা পযান্ত উঠেছে।
ওষুধ বিক্রেতারা জানান, ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন ওষুধের দাম ১০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। লরিক্স প্লাস লোশন, নাপা সিরাপ, ডায়াবেটিসের ওষুধ কমেট ও ইনসুলিনের মতো প্রয়োজনীয় ওষুধের দামও আকাশ ছুঁয়েছে। এক পোশাককর্মী তার অসুস্থ বাবার ওষুধ কেনার জন্য পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় অর্ধেক ওষুধ ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন। ওষুধ বিক্রেতারা জানান, অনেকে এখন পুরো কোর্স না কিনে অর্ধেক কিনছেন, যা সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থার গভীরতা প্রমাণ করে। মাছের দামও কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমে কেজি প্রতি ১৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিথীলা দাস পরামর্শ দিয়েছেন, মানুষ যেন সহজ শর্তে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঋণ নেয় এবং বাজারদর নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তদারকি অব্যাহত রয়েছে।
