ePaper

আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা ন্যায্য দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইসঙ্গে শ্রেণিকক্ষে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষকরা।

মন্ত্রণালয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে হওয়া এই আলোচনায় ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার ও শিক্ষা সচিব রেহানা পারভীন।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন আজিজীর নেতৃত্বে গত ১২ অক্টোবর থেকে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশি নির্যাতনের পর ১৩ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি ও সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা।

বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার জানান, অর্থ উপদেষ্টা বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে আগামী অর্থবছর থেকে শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ভাতা ১০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানাবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের শিক্ষা সচিব রেহানা পারভীন বলেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৫ শতাংশ বা সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন শিক্ষকদের। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওই প্রস্তাবনা মেনে আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে আগামী বেতন স্কেলে শিক্ষকদের দাবির বিষয়গুলো বিবেচনা করারও আশ্বাস দেন।

এই বৈঠকে শিক্ষক প্রতিনিধিরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। বৈঠক শেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আপনারা অবগত আছেন যে, গত ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব ও শহীদ মিনারের সামনে আমরা দাবি আদায়ে টানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে টানা ২২ দিন এমপিওভুক্তির জন্য আন্দোলন করেছি। তখন শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, আমাদের উৎসব ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বর্তমান বাজেট থেকে দেওয়া হবে এবং শিক্ষকদের জন্য আরেকটা বিনোদন ভাতা বৃদ্ধি করবেন। সেই আশ্বাসে আমরা আন্দোলন স্থগিত করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাই। তখন আমরা আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম আমাদের ভাতা কার্যকর না হলে আমরা আবার আন্দোলনে আসবো। সরকার আমাদের উৎসব ভাতা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে এজন্য ধন্যবাদ জানাই।’

অধ্যক্ষ মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘যেহেতু শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছিলেন আমাদের অন্যান্য ভাতা বাড়ানো হবে এবং বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। এরপর আমরা একটা আল্টিমেটাম দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেই আগস্টে। সেখানে বলা হয়েছে ১৩ আগস্টের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে যাবো। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ভাতা ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ ও বাড়ি ভাড়া ৫ শতাংশসহ অন্যান্য কিছু সুবিধা দিয়ে একটা চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে। সেই চিঠি আমাদের কাছে আসে। তারপর আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৩ আগস্ট থেকে আন্দোলনে এলাম। তখন শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা সভা করে বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করলে তিনি তাতে রাজি হলেন। তারপর আমরা সেখান থেকে চলে যাই।’

মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আজ আমাদের এখানে ডাকা হয়েছে সমস্যা সমাধানের জন্য। আমরাও চাই সমস্যা সমাধান করে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবো। কিন্তু আজ আসার পর তারা আগের সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও সরতে রাজি নন। তারা আলোচনার নামে আই ওয়াশ করেছেন। তারপর আমরা আজ আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছি, সেখানে আমরা বর্তমান বাজেট থেকে ১০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া এবং আগামী বাজেট থেকে ১০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া দেবেন। সে বিষয়টা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন করতে হবে। সেটা পুনঃবিবেচনার জন্য বলে ছিলাম। সেটা তারা করেননি। তারপর আমরা বলেছি আমাদের পক্ষে এ ক্লাইড কোনোভাবে ম্যানেজ করা সম্ভব না। আমরা এটা পারবো না। এরপর উপদেষ্টা উঠে চলে গেছেন এবং আমরাও চলে আসছি।’

শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। সাত লাখ কোটি টাকার বাজেটে হাজারো কোটি টাকায় আসবাবপত্র কিনতে পারে, বিভিন্ন প্রকল্পের নামে তসরুপ হচ্ছে। কিন্তু সরকার শিক্ষকদের তিন হাজার টাকা দিতে পারছে না। এ রাষ্ট্র দেওলিয়া হয়ে যাক আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোনও অবস্থাতেই আমরা আমাদের শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরবো না। আমরা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করব না। শান্তিপূর্ণভাবে অনশন করতে করতে এখানে মরে যাবো। আমাদের শহীদ মিনারে ফায়ার করে মেরে ফেলেন তবুও আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যাবো না। যেতে হলে আমাদের লাশ যাবে।’

দেলাওয়ার হোসেন আজিজী আরও বলেন, ‘যে রাষ্ট্র ছয় লাখের বেশি শিক্ষকদের ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করতে পারে না। সেই রাষ্ট্রের উচিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে বন্ধ করে দিয়ে সবাইকে ছুটি দিয়ে দেওয়া। আমরা সিএনজি, রিকশা চালিয়ে, কৃষি কাজ ও দিন মজুরের কাজ করে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করবো।’

এদিকে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচ শতাংশের বেশি আধা শতাংশও এখন বাড়ানো যাবে না, বাজেটের যে অবস্থা। এখন অর্থনীতি খুব যে ঘুরে দাঁড়াবে সেটা যদি আমরা বলতাম তাহলে ৩০ শতাংশ বলতেও আমাদের আপত্তি থাকতো না। কিন্তু আমরা এমন কিছু কমিট করে যেতে চাই না যে, পরবর্তী সরকারের জন্য বড় রকমের ঝামেলা হবে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা ন্যূনতম ৫ শতাংশের কথা আমরা অর্থ বিভাগকে বলবো, তারপর যদি দেন-দরবার করে বাড়ানো যায় হবে।’

‘আমরা মনে করি দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছি, তাদের অবস্থান যদি বদলাম তাহলে যেকোনো সময় যদি আমাদের বলেন, তাহলে আমরা রেডি প্রজ্ঞাপন জারি করবো। আমরা বলেছি, আপনারা যদি অ্যাকসেপ্ট করেন তাহলে আমরা প্রজ্ঞাপন করবো, তা নাহলে করবো না। আমাদের এখন বড় কনসার্ন হচ্ছে জনদুর্ভোগ হচ্ছে, ছাত্রদের সামনে পড়াশোনা রয়েছে। এখন আন্দোলন করে নিয়ে গেলাম আর ওইখানে গিয়ে আবার আন্দোলন চালাবো সেটা হবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *