কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খানকে হত্যার রাতে তার মাকে ফোন করে সিনহা সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছিলেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস। তবে পুলিশ হত্যার কথা জানায়নি বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তার। সিনহার মা নাসিমা আক্তার কাঁদতে কাঁদতে সন্তান হত্যার বিচার চেয়েছেন।
১০ আগস্ট সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর উত্তরার বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সিনহার মা এসব কথা বলেন।
সিনহার মা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘মেজর সিনহা রাশেদ খানকে হত্যার রাতে আমার কাছে ফোন করে সিনহা সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছিলেন ওসি প্রদীপ। তবে তখন সিনহাকে হত্যার কথা জানায়নি পুলিশ।’
তিনি বলেন, ‘হত্যার পর দিন অর্থাৎ ঈদের দিন সকালের দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ আমাদের বাসায় আসে। পুলিশ প্রশ্ন করেন, এটি মেজর সিনহার বাসা কি না। আমি ভেবেছিলাম, কাজে গিয়ে হয়তো কোনও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, এজন্য হয়তো পুলিশ সিনহার বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাইছে।’
তখন পুলিশকে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের পরিচয় দেয়ার পর তার মা ভেবেছিলেন, কাজে গিয়ে কোনও জটিলতা তৈরি হলে সিনহার পরিচয় দেয়ার পর হয়তো মিটে যাবে। তিনি বলেন, ‘তখনও আমরা সিনহার হত্যার কথা জানতাম না।’
এরপরই তাকে (সিনহার মাকে) প্রশ্ন করা হয় সিনহা রাশেদ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি-না। এর জবাবে সিনহার মা বলেছিলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি ১০০ পার্সেন্ট বলতে পারি, সিনহা রাজনীতির সঙ্গে মোটেও জড়িত ছিল না। আমি রাজনীতির সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা দেখিনি।’
এছাড়া সিনহার মাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন সিনহা সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। এর জবাবে সিনহার মা বলেছিলেন, ‘বিশ্ব ভ্রমণসহ আরও কিছু কাজ করার ইচ্ছে থাকায় চাকরি ছেড়েছিল সে।’
সিনহার মা বলেন, ‘সে (সিনহা) দেশকে নিয়ে অনেক ভাবতো। ছেলে আমাকে বলতো, ‘আম্মা, আমরা যদি দেশে ভালো কিছু রেখে যাই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটা অনুসরণ করবে’।’
নাসিমা আক্তার আরও বলেন, ‘সিনহা সবসময় ক্রিয়েটিভ কাজ করতে চাইত, সবসময় সারপ্রাইজ দিতে চাইত কাজের মাধ্যমে। ও বলতো, আমি আমার মনের খোরাকের জন্য কাজ করি; যাতে মানুষ উপকৃত হয়। একটা ডকুমেন্টারি করছি। এখনো বলার মতো কিছু হয়নি। যখন হবে তখন সবাইকে বলবো।’
সাংবাদিকদের করা অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুত্র হারানো শোকবিহ্বল এই মা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সিনহা হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমি প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে ধন্যবাদ জানাই।’
অন্যদিকে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনায় কক্সবাজার পুলিশ সুপারের (এসপি) প্রত্যাহার চেয়েছে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া)।
অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের যে অগ্রগতি তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করব এই বিচার প্রক্রিয়া যেন খুব দ্রুত শেষ করা হয়। যেহেতু সকল তথ্য-প্রমাণ পরিষ্কার। এখন অবশ্য আমাদের একটি দাবি, সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি মাসুদ হোসেনের প্রত্যাহার।’