ePaper

 নোয়াখালীর পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য জিম্মি যাত্রীরা

ইয়াকুব নবী ইমন, নোয়াখালী

নোয়াখালীর বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী পরিবহনে নৈরাজ্য চলছে। সর্বত্র বিরাজ করছে অব্যবস্থাপনা। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বেড়েই চলছে জনদূর্ভোগ। যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কাছে। দ্রুত এই নৈরাজ্যের সমাধান চায় ভূক্তভোগীরা। সূত্র জানায়, জেলার সোনাইমুড়ী-চাটখিল-রামগঞ্জ, চৌমুহনী-ফেনী-লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর,নোয়াখালী-লাকসাম রুটে যাতায়াত করে আনন্দ, আধুনিক, জননী, সুগন্ধা, যমুনা, উপকূল সহ বিভিন্ন পরিবহন। নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে তারা প্রায় সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। যেখানে সেখানে থামিতে যাত্রী উঠানামা করানোর কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব গাড়ির অধিকাংশেরই ফিটনেস নেই। অদক্ষ্য ড্রাইভারের কারণে প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান অনেক যাত্রী। এই পরিবহন মালিক শ্রমিকদের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে যাত্রীরা। এসব অনিয়ম নিয়ন্ত্রনে কারো প্রদক্ষেপ নেই। এদিকে আঞ্চলিক বাসগুলোর পাশাপাশি জেলার উপর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, বরিশাল, ভোলাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে একুশে, ঢাকা এক্সপ্রেস, লাল সবুজ, জননী, ইকোনো, বাঁধন, কে.কে ট্রাবেলস, হিমাচল, জোনাকী, শাহীসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাসগুলো। এই বাসগুলোও অনেকটা নিয়ন্ত্রনহীন। জেলার সোনাপুর, মাইজদী, চৌমুহনীতে বাস ষ্টান্ড থাকলেও দুরপাল্লার বাসগুলো যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী উঠামানা করায়। লোকাল সুগন্ধা, আনন্দ, জননী নামের লোকাল বাসগুলো সোনাপুর থেকে ছেড়ে মাইজদী বাজার পর্যন্ত যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করায়। কিন্দ মাইজদী বাজারের পওে চৌমুহনী-চৌরাস্তায় ১০-১২ কিলোমিটার দুরত্বে গাবুয়া বাজার, একলাশপুর বাজার, রমজানবিবির মতো গুরুত্বপূর্ব বাজারে স্টান্ড না থাকার অজুহাতে যাত্রী উঠানামা করায় না। গ্যাস চালিত এ বাসগুলো ১০-১২ কিঃমিঃ জায়গায় ১৫-২০ টাকা ভাড়া আদায় করে। চৌরাস্তায় বাস ষ্টান্ড থাকার পরেও আনন্দ, জননী, উপকূল নামের গাড়ি গুলো চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে যানঝট সৃষ্টি করে। চৌমুহনীতে বাসস্ট্যান্ড থাকার পরও ফেনী ও চট্টগ্রাম অভিমূখী বাসগুলো করিমপুর রোড থেকেই যাত্রী উঠা নামা করায় পুরা শহর জুড়েই যানজট সৃষ্টি করে।

চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী সহিদ উল্লা মিয়া বলেন, একলাশপুর থেকে বাস ভাড়া নিতো ৫ টাকা, ফোর লেন রাস্তা হওয়া পর বাস এখন একলাশপুর দাঁড়ায় না। সিএনজি অটোরিকশাগুলো জুলুম করে আমাদের থেকে ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা নেয়। আমরা এখানে বাস স্টান্ড চাই। মাইজদী- চৌরাস্তা-চৌমুহনীতে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশা রিক্সাগুলো দিনের বেলায় ২০ টাকা ভাড়া নিলেও সন্ধ্যার পর হলেই ৩০ টাকা ভাড়া আদায় করে। কিন্তু রমজান বিবি বা একলাশপুর অর্ধেকের কম দুরত্ব হলেও ২০ টাকা ভাড়ায়ই আদায় করছে। মাঝ পথের এসব যাত্রীরা রীতিমতো পরিবহন ব্যবস্থার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। চৌরাস্তা, চৌমুহনীতে সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলোর কোনো ষ্টান্ড না থাকার অজুহাতে সারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানজট ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলছে। এক্ষেত্রে অটোরিকশা চালকদের অভিযোগ, আমাদেরকে কোনো ষ্টান্ড সুবিধা না দিয়ে দৈনিক ১৫ টাকা আদায় করা একধরনের চাঁদাবাজি। ষ্টেন্ড না দিয়ে এ চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য তারা জোর দাবি জানান। এদিকে জেলার সকল উপজেলার সাথে বাস যোগাযোগ থাকলেও বসুুরহাট থেকে কবিরহাট হয়ে মাইজদী বা সোনাপুর আসা যাওয়ার কোন বাস সার্ভিস নাই। স্থানীয় শিক্ষক আবুল কালামসহহ অনেকেই অভিযোগ করেন, অটোরিকশার মালিক শ্রমিকরা ষড়যন্ত্র করে বাস সার্ভিস বন্ধ করে রেখেছে। বিষয়টি প্রশাসনকে খতিয়ে দেখা দরকার। চৌমুহনী পৌর প্রশাসক ও বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুর রহমান জানান, অটোরিকশার জন্য চৌমুহনী তারা মঞ্জিলের সামনে, চৌরাস্তায় যাদুঘরের সামনে এবং বিদুৎ অফিসের সামনে ষ্টান্ড করার বিষয়টি পৌরসভার সাথে ইজারাদারের স্পষ্ট চুক্তি রয়েছে। ষ্টান্ডের বাহিরে থেকে টাকা আদায় কালে যানজট তৈরির অপরাধে মোবাইল কোর্ট করে শৃঙ্খলায় আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। রাস্তা থেকে সরিয়ে ষ্টান্ড করার ইচ্ছা থাকলেও অনেক দিনের কালচার পরিবর্তন হতে সময় লাগবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নোয়াখালী পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দীন জানান, পৌরসভায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলমান। এ সুযোগে কোনো অটোরিকশা স্টান্ড করা যায় কিনা পরিকল্পনায় আছে। আপাতত পুরান বাস ষ্টান্ড এলাকায় তাদের ষ্টান্ড নির্ধারন করা আছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করবেন বলেও জানান তিনি। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, পরিবহনের বিশৃংখল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আমরা কাজ করছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে বা যাত্রীর সাথে দূর্বব্যহার করলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যেমে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *