ePaper

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার বড় ঝুঁকি কী কী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসানে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০টি পয়েন্ট বিশিষ্ট নতুন যে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা হাজির করেছিলেন ট্রাম্প, গত কাল বুধবার সেই পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েল ও গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস।ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের স্থায়িত্ব হবে ৬ সপ্তাহ। এই ছয় সপ্তাহে নিজেদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর পরিবর্তে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের চির প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়াও ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে; রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, গাজায় রক্তপাত বন্ধের জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাব ‘সেরা’ এবং এ মুহূর্তে এই প্রস্তাবের কোনো বিকল্প নেই।তবে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের প্রস্তাবে এখন কয়েকটি বড় ঝুঁকি রয়ে গেছে। যেমন প্রথমত, ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসকে সম্পূর্ণ অস্ত্র সমর্পণ করতে বলা হয়েছে; কিন্তু হামাস এই প্রস্তাবে এখনও সায় দেয়নি। যুদ্ধের গত দুই বছরে এর আগেও হামাসকে কয়েক বার অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই গোষ্ঠীটি সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।একই অবস্থা গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রেও। ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর বেশ কয়েকবার  ইসরায়েলকে গাজা উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে; কিন্তু বরাবরই তাতে আপত্তি জানিয়েছে ইসরায়েল।গত ৩ অক্টোবর হামাস নতুন প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় সম্মতি জানানোর পরের দিন ৪ অক্টোবর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে টেলিফোন করে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেন ট্রাম্প। নেতানিয়াহু তাতে সম্মতিও জানান।তবে ট্রাম্প আহ্বান জানানোর পর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা বর্ষণ কমলেও সম্পূর্ণ থামেনি। ট্রাম্প গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান জানানো পর গত চার দিনে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গজায় নিহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। এমনকি ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে গতকাল মিসরে যখন হামাস, ইসরায়েল, মিসর, কাতার ও ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক চলছিল, তখনও গাজায় বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগ জানিয়েছে, বুধবার রাতে উত্তর গাজায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।আরও একটি বড় জটিলতা আছে। ইসরায়েলি বাহিনীর গত দুই বছরের অভিযানে বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দাবি। গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে বৈশ্বিক সম্মেলন হয়েছে। এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা ছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব। জাতিসংঘের অধিকাংশ রাষ্ট্র এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সেটি বয়কট করেছিল।সেই সম্মেলনে এবং সম্মেলনের আগে ও পরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয় ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, লুক্সেমবার্গসহ বেশ কয়েকটি দেশ। এ যুদ্ধের দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, মিসর এবং পুরো আরব ও মুসলিম বিশ্ব স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে সোচ্চার।তবে নেতানিয়াহু ও তার নেতৃত্বাধীন সরকার তীব্রভাবে স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরোধী। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাতেও এ বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দিয়ে গাজা’র ওপর ফোকাস করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *