চামড়াজাত পণ্যের দাম বাড়লেও প্রতিবছরই কমছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবছর কোরাবনির ঈদের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার দাম কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। আর এভাবেই গত কয়েক বছরে গরুর চামড়ার দাম কমে অর্ধেকের নিচে ও খাসি চারভাগের একভাগে নেমেছে। এতে করে ট্যানারি মালিকরা লাভবান হলেও বঞ্চিত হচ্ছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী ও চামড়ার টাকার হক ভাগিদার গরিব সাধারণ মানুষেরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। ওই সময়ে লবণযুক্ত ছাগলের চামড়ার বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। মাত্র সাত বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে লবণযুক্ত প্রতিবর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়ার দাম মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় এবং প্রতি বর্গফুট ছাগলের চামড়ার ১৩ থেকে ১৫ টাকায় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
গত ৭ বছরে গরুর চামড়া দাম কমেছে ৫৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। একই সময়ে ছাগলের চামড়ার দাম কমেছে ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৩ সালে ছাগলের চামড়া যে দামে পাওয়া যেত, ২০২০ সালে এসে গরুর চামড়া তার চেয়েও কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।
কোরবানির গরু-ছাগলের চামড়ার কেনাবেচা নিয়ে বিক্রেতা ফরিয়া ও বেপারি, তিনপক্ষই অসন্তুষ্ট। বিক্রেতারা বলছেন, সরকারের নির্ধারিত মূল্য পাচ্ছেন না তারা। ফরিয়ারা বলছেন, যে দামে বিভিন্ন মহল্লা থেকে চামড়া কিনেছেন, সেই দামে বেপারিদের কাছে বিক্রি করতে পারছে না।
আর বেপারিরা বলেন, যে দামে চামড়া কেনার কথা সে দামে পাচ্ছেন না তারা। চামড়ার বাজারের এই অবস্থার কারণে অনেকেই তাদের পশুর চামড়া বিভিন্ন এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংকে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন।
এর বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পশু কোরবানির যে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে তাতেও উপরের কারণগুলোই স্পষ্ট। করোনা আর ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া ব্যবসায়ীদের বড় অঙ্কের বকেয়া।
এদিকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের কাজ তদারকি করতে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশনায় রাজধানী ঢাকায় দুইটি টিমসহ দেশের ৬১ জেলায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রয় হচ্ছে কিনা এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা হয়।’
এর আগে গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা “জাতীয় সম্পদ চামড়া, রক্ষা করবো আমরা” স্লোগানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ পদ্ধতি বিষয়ক লিফলেট বিলি করা হয়। সেই আলোকে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি-না তা তদারকি করা হয়।