গাজীপুর মহানগরীর নলজানী এলাকার প্রতিবন্ধী শিশু (৭) অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা পোশাককর্মী তামিম হোসেনকে (২০) আটক করেছে র্যাব। গাজীপুর শহরে বাড়ি, গাড়ি ও একটি পিস্তল কিনে এলাকায় সন্ত্রাসী রাজত্বসহ বিলাসবহুল জীবন-যাপন করার লক্ষ্যে ফাহিমকে অপহরণ করার কথা জানিয়ে অভিযুক্ত তামিম।
বুধবার বিকেলে র্যাব-১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্প এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
আটক তামিম হোসেন হবিগঞ্জের রাখাইকালো থানার সুজনপুর এলাকার রইচ মিয়ার ছেলে। সে নলজানী এলাকার নাজীম উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থেকে পোশাক কারখানায় কাজ করত।
র্যাব জানায়, গত ২৭ জুলাই দুপুরে নলজানী এলাকার ভাড়াটিয়া কামরুল ইসলামের শিশু সন্তান ফাহিম নিজ বাসা হতে নিখোঁজ হয়। ভিকটিমের পরিবার ফাহিমকে অনেক খুঁজে না পেয়ে জিএমপির বাসন থানায় রাতে জিডি করেন। ওই রাতে ভিকটিমের বাবার মোবাইল ফোনে ফাহিমকে অপহরণের কথা জানিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অন্যথায় ফাহিমকে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়া হয়। এদিকে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে উদ্ধারে র্যাব-১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্পে আইনগক সহযোগিতা কামনা করেন। র্যাব ভিকটিমকে উদ্ধার এবং অপহরণকারীকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এরই এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় ভিকটিমের ভাড়া বাসার পাশের ঝোপ থেকে প্লাস্টিকের বস্তার ভিতর হতে ফাহিমের লাশ উদ্ধার হয়।
র্যাব আরো জানায়, ২৮ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জেলা শহরের শিববাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা তামিম হোসেনকে আটক করে। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তামিম ভিকটিম ফাহিমকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে এবং এই হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।
তামিমের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, তামিম দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবারের সাথে ওই বাসায় ভাড়া থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ সে মনে মনে ধনী হওয়ার পরিকল্পনা করে এবং তার পাশের বাসার শিশুটিকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামতে সে ফাহিমকে অপহরণ করে। পরে একটি পরিত্যক্ত রুমের তালা ভেঙে ফাহিমকে মুখে কসটেপ পেচিয়ে, রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে গলায় কাপড় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং লাশ একটি বস্তার ভিতর রেখে রুমের তালা লাগিয়ে দেয়। পরে ফোনে অপহরণের কথা জানিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। সন্তানকে বাঁচাতে ভিকটিমের পরিবার প্রথমে অপহরণকারীকে দুই হাজার টাকা বিকাশ করে। পরে বিকাশে টাকা পাওয়ার পর শিববাড়ী এলাকায় চলন্ত গাড়ি থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফেলে দেয়। নিখোঁজের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এবং ভিকটিমের পরিবার ফাহিমকে খোঁজা শুরু করলে, সুযোগ বুঝে ভিকটিমের বস্তাবন্দি লাশ ওই ঝোপে ফেলে পালিয়ে যায়।
তামিম র্যাবকে আরও জানায়, সে অল্প সময়ে ধনী হওয়ার জন্য এই কাজ করে। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এভাবে শিশুদের অপহরণ করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে গাজীপুর শহরে একটি বাড়ি, গাড়ি ও একটি পিস্তল কিনে এলাকায় সন্ত্রাসী রাজত্বসহ বিলাসবহুল জীবন-যাপন করাই তার লক্ষ্য ছিল।