ePaper

বেনাপোল দিয়ে সাতদিনে ভারতে গেলো ১০৩ টন ইলিশ

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

বেনাপোল বন্দর দিয়ে সাতদিনে ১০৩ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ২০০ টন। গতকাল রোববার বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টাইন অফিসার সজিব সাহা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সরকারের বিশেষ অনুমতিতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হলেও অনেকে প্রতিষ্ঠান এখনো ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি করতে পারেনি। ৫ অক্টোবর পর্যন্ত শেষ সময় থাকলেও ইলিশ প্রজননের কারণে ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে রপ্তানি হবে না। গত সাতদিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১০২ টন ৮৩৪ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। এ দিকে লোকসানের ভয়ে ভারতে ইলিশ পাঠাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। চাঁদপুর, পটুয়াখালি, ভোলা, বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানের ইলিশ মোকামে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। রপ্তানি শুরুর পরদিন থেকে রপ্তানিকারকরা ইলিশ কিনছেন না। তাদের দাবি, চড়া দামে কিনে কম দামে রপ্তানি করায় লোকসান হচ্ছে। এ ছাড়া কলকাতার বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ থাকায় সেখানকার ব্যবসায়ীদের ইলিশ কিনতে আগ্রহ নেই। আগের মতো ইলিশের দাম দেশের বাজারে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমের শুরু থেকে সাগর-নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায় দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। রপ্তানিযোগ্য (৬০০ গ্রামের বেশি) ইলিশের দাম পাইকারি এক হাজার ৮০০ টাকা। এক কেজি বা এর বেশি ওজন হলে তার দাম দুই হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা। রপ্তানির জন্য মাছ প্যাকেটিং ও বেনাপোল পর্যন্ত পরিবহন খরচ যুক্ত করলে কেজিতে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বেড়ে যায়। ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত এক হাজার ৫৩৩ টাকা কেজি দরে রপ্তানি করলে বড় লোকসান হবে। বেনাপোলের ইলিশ রপ্তানিকারক বিশ্বাস ট্রেডার্সের মালিক নুরুল আমিন বিশ্বাস জানান, আমি ৩০টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি। এ পর্যন্ত কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। একই কথা জানালেন শার্শার বাগআঁড়ার বড় ইলিশ রপ্তানিকারক জনতা ফিসের মালিক আব্দুল কুদ্দুস, ‘বেনাপোলের মাহাতাব অ্যান্ড সন্সের মালিক শাহাজালাল সোহেল বলেন, আমরা ৩০ টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি। বাজারে ইলিশের দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে এ পর্যন্ত কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। বেনাপোলের সততা ফিসের রেজাউল ইসলাম খোকন বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান এবার ৪০টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি। মাত্র ৩ টন ইলিশ প্রথম দিনে রপ্তানি করতে পেরেছি। মাছ না পাওয়ায় ও দাম বৃদ্ধির কারণে এরপর আর কোনো ইলিশ রপ্তানি করা যায়নি। বেনাপোল মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে। ওইদিন ৮টি ট্রাকে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এছাড়া ও ১৮ সেপ্টেম্বর ২৬ হাজার ৩৫৮ কেজি, ২০ সেপ্টেম্বর ৬ হাজার কেজি, ২৩ সেপ্টেম্বর ১১ হাজার ৭৬০ কেজি, ২৪ সেপ্টেম্বর ২ হাজার কেজি, ২৫ সেপ্টেম্বর ৬ হাজার কেজি এবং শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ১২ হাজার ৮৯৬ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। এ নিয়ে সাতদিনে বেনাপোল দিয়ে ভারতে রপ্তানি হলো ১০২ মেট্রিক টন ৮৩৪ কেজি (১ লাখ ২ হাজার ৮৩৪ কেজি) ইলিশ। এবার প্রতি কেজি ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ১২.৫ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি ১ হাজার ৫৩৩ টাকা দরে। ইলিশ মাছ রপ্তানি নিষিদ্ধ হলেও দুর্গাপূজায় বাংলাদেশ সরকার ভারতে এক হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে। এরমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন, ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ টন করে ৭৫০ টন, ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ টন করে ৩৬০ টন এবং দু’টি প্রতিষ্ঠানকে ২০ টন করে ৪০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এদিকে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে ক্ষুব্ধ যশোরসহ গোটা দেশের মানুষ। দেশের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও ভারতে রপ্তানি হচ্ছে এক হাজার ৫৩৩ টাকায়। এটি কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অবশ্য ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র বলেছে, প্রকৃতপক্ষে ওই দরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে না। ইলিশ রপ্তানির খবরে বেনাপোলসহ আশপাশের এলাকার বাজারগুলোতে ইলিশ সংকট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাগামহীন দাম বাড়ানোয় সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে রসনাবিলাস বাঙালির জাতীয় মাছ ইলিশ। বেনাপোল বাজারের জয় মৎস্য ভাণ্ডারের মালিক বিকাশ দেবনাথ বলেন, স্থানীয় বাজারে যেখানে প্রতি এক কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার টাকার ওপরে সেখানে ভারতে এক হাজার ৫৩৩ টাকা কেজিতে কীভাবে রপ্তানি হচ্ছে সেটি বোঝা যাচ্ছে না। এছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম আকারের ইলিশ দেড় হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *