রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
পিচ ঢালাই উঠে গেছে। ছোট-বড় গর্তে ভরা সড়ক। নর্দমা ব্যবস্থার বেহাল। কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও উন্নয়ন হয়নি বাজারের। অতিরিক্ত জনবল থাকলেও বেশির ভাগ অদক্ষ। তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধে দফায় দফায় বাড়াতে হয় কর। এদিকে নিয়মিত কর পরিশোধ করেও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত নাগরিকরা। এ চিত্র সিরাজগঞ্জ পৌরসভার। নামে প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভা নাগরিক সুযোগ-সুবিধায় দুর্বল হলেও কর বাড়াতে পিছপা হয় না। গোশালা রেলগেট থেকে কালীবাড়ি হয়ে আমলাপাড়া পর্যন্ত সড়কের নানা স্থানে খানাখন্দ। হাসপাতাল রোড থেকে হোসেনপুর হয়ে উপজেলা, মাছিমপুর ও কান্দাপাড়ার রাস্তাও ভাঙাচোরা। তাতেই দাপিয়ে বেড়ায় রিকশা, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান। দূরপাল্লার ট্রাকে যেখানে সেখানে মালপত্র ওঠানামায় বিধিনিষেধ থাকলেও নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেই। পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী নুরন্নবী তালুকদার বলেন, ভাঙা রাস্তা মেরামতে এডিপি ও কভিড প্যাকেজের মাধ্যমে সাড়ে তিন কোটি টাকার দরপত্র আহবান করা হয়। বৃষ্টির কারণে কাজ ধরতে দেরি হলেও ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। ফুটপাত থাকলেও হাঁটার উপায় নেই। সেখানে ভেন্ডর ও হকার অস্থায়ী দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছে। ফুটপাত ঘেঁষে রাস্তায় সারি সারি ভ্যানে ফলের ভ্রাম্যমাণ দোকান। রয়েছে শত শত অটোরিকশা। গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। যানজটের কারণে বাজার স্টেশন থেকে এসএস রোড দিয়ে ইলিয়ট সেতু পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথ যেতে ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। এস এস রোড, মুজিব সড়ক, গোশালা এসবি, ফজলুল হক, নিউ ঢাকা রোড, বাজার ষ্টেশন, মুক্তির সোপান, স্বাধীনতা স্কয়ার, জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও আদালত চত্বরে যেখানে সেখানে পার্কিং হচ্ছে যানবাহন। নিউ ঢাকা রোডের রেলগেট মোড় ও বাজার ষ্টেশন স্বাধীনতা স্কয়ারে রয়েছে অবৈধ অটোরিকশার স্ট্যান্ড। পৌরসভার এমএ.মতিন বাস টার্মিনাল ও মিরপুর বাসস্ট্যান্ড থাকতেও নিউ ঢাকা রোড থেকে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা রুটে প্রতিদিন অর্ধশত বাস থামছে। বাজার ষ্টেশন এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত বসে মাছ-সব্জির হাট। ফুটপাত দখল মুক্ত না করে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে পার্কিং টাইলস প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। শতাধিক স্থানে ড্রেনের ওপর অপরিকল্পিত বসানো সেসব টাইলস তুলে স্লাব বসাচ্ছে যে যার মতো। এতে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পৌরসভার এমন লুটপাট প্রকল্পে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষুব্ধ। জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (অ্যাডমিন) মোফাখ্খারুল ইসলাম বলেন, সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। পুলিশের পক্ষে এককভাবে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারহান ইমতিয়াজ সুমেল বলেন, যানজট নিরসনে বাস্তবসম্মত মাস্টারপ্ল্যান দরকার। পৌরসভা চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে পারি। দেড়শ বছরেও পৌরসভার ‘স্থায়ী মাস্টারপ্ল্যান’ নেই। জার্মান দাতা সংস্থার সহযোগিতায় ২০২৩ সালে খসড়া মাস্টারপ্ল্যান হলেও তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। এদিকে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে দাতা সংস্থা থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে উচ্চাভিলাষী নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে তেমন কাজ না হলেও ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ দেওয়া হয় অতিরিক্ত জনবল। তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধে দফায় দফায় কর বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ শহরবাসী। এ বিষয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর পরপর (সাধারণ), প্রতিবছর অন্তর্র্বতীকালীন কর বাড়ানো হয়। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের আপিল ও আপত্তি প্রদানের সুযোগ থাকে। তিনি বলেন, পৌরসভায় ৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৫৩৪ জন দৈনিক হাজিরায় চুক্তিতে কাজ করেন। এ জনবল তুলনায় অপ্রতুল।
বেহাল কাঁচাবাজার ঃ ফজলুল হক রোডে শিশু পার্ক উচ্ছেদ করে পৌর কাঁচাবাজার নির্মাণ করা হয় দু’দশক আগে। প্রতিদিন শতাধিক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয়। সেখানে বৃষ্টির পানি জমে কর্দমাক্ত ও বেহাল। বর্জ্যরে দুর্গন্ধে অসুবিধা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ। কাঁচাবাজারের পেছনে জার্মান দাতা সংস্থার কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গরু-মুরগি বাজার ও পশু জবাই কেন্দ্র নির্মিত হয় তিন বছর আগে। ব্যবসায়ীরা না আসায় এখনও চালু হয়নি। এদিকে তিন কোটি টাকা সুদ যোগ হয়ে ১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, উচ্চ সুদে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কাজ না হলেও দেনা বেড়েছে। যেখানে হাত দিচ্ছি, সেখানেই সমস্যা।
পৌর কাটাখাল আবর্জনার ভাগাড় ঃ দাতা ও দেশীয় সংস্থার কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ৯ কিলোমিটার কাটাখালের সৌন্দর্য বর্ধন ও খনন প্রকল্প নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। সৌন্দর্য বর্ধন দূরের কথা, খালটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এটি এখন কচুরিপানা ঝোপজঙ্গল মিলে মশার প্রজনন কেন্দ্র। বাজারের মাছ-মুরগিসহ পশুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এ খালে। ব্রিটিশ আমলে এ খাল দিয়ে গোশালা কুঠি থেকে নৌকাবোঝাই পাট ভারতের বিভিন্ন বন্দরে নিয়ে যাওয়ার গল্পটা এখন অতীত।
ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গণপতি রায় বলেন, বাজার স্টেশন থেকে অটোরিকশা স্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা চলছে। যানজটের বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, যানজট নিরসন প্রক্রিয়া চলমান। নিউ ঢাকা রোডে প্রায়ই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
