করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নেবাখালী জগন্নাথপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আলফাজ উদ্দীন (৭০)।
স্বাস্থ্য বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইউনিয়ন পরিষদের লাশ দাফন কমিটির সাহায্য না পেয়ে স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই লাশ বহন, কাফন, দাফন করতে বাধ্য হলেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে সাতক্ষীরা সদরের শিবপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষ। এ ঘটনায় দুঃখ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভূক্তভোগী পরিবারসহ স্থানীয় জনগন।
সরেজমিনে জানা যায়, শুক্রবার ২৪জুলাই সকালে মুক্তিযোদ্ধা আলফাজ উদ্দীন(৭০) করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তবে লাশ বহন, কাফন, দাফন করানোর জন্য একটা টিম পাঠানোর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয় সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগকে। এর পর স্বাস্থ্য বিভাগ ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে দায়িক্ত দিয়েছে বলে জানান সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের করোনা বিষয়ক মুখপাত্র ডা. জয়ন্ত সরকার। তবে বিকাল পর্যন্ত লাশ দাফনে কেউ না আসায় বাধ্যহয়ে নিজ পরিবারের সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লাশ বহন, কাফন, দাফন করতে বাধ্য হয়েছেন।
আলফাজ উদ্দীনের স্ত্রী হাসিনা বেগম জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে আলফাজ উদ্দীন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪জুলাই শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান। সবার স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তাকরে লাশ দাফন করানোর জন্য সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত কুমার সরকারকে জানানো হয়। এসময় ইসলামিক ফাউন্ডেশন লাশ বহন, গোসল, কাফন ও দাফন করবেন বলে জানান তিনি। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোন ব্যক্তি লাশ বহন না করায় পারিবারিক ভাবে লাশ বহন করা হয়।
এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডা. জয়ন্ত কুমার সরকারকে পুনরায় জানানো হলে তিনি জানান ইসলামিক ফাউন্ডেশন গোসল, কাফন ও দাফন করাবেন। তবে আসরবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোন ব্যক্তিই গোসল করাতে আসেননি। পরবর্তীতে পারিবারিক ভাবে স্বাস্থ্যঝূঁকি নিয়ে আমার স্বামীর গোসল ও দাফন করানো হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন না আসায় ডা. জয়ন্ত সরকার দুঃখ প্রকাশ করেছে জানিয়েছেন তিনি আরো বলেন, সিভিল সার্জন অফিসের দায়িক্তহীনতা ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের উদাসীনতার কারণে কয়েকশ পরিবার করোনা ভাইরাসে সংক্রামণের ঝূঁকিতে রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, শুনেছি কিছুদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফনের জন্য আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদকেকে সভাপতি করে প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি কমিটি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আলফাজউদ্দীন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন তবুও লাশ দাফনের জন্য ইউনিয়নের সেই কমিটিসহ কেউ এগিয়ে আসেননি। পারিবারিক ভাবে লাশ দাফন করা হয়েছে। এখন আমরা মারাত্মক করোনার ঝুঁকিতে পড়ে গেছি।
এদিকে শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, উপর মহলের কেউ আমাদেরকে জানাননি যে মুক্তিযোদ্ধা আলফাজ উদ্দিন করোনায় মারা গেছেন তার লাশ দাফন করাতে হবে। এজন্য আমরা তার লাশ দাফন করতে যায়নি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের করোনা বিষয়ক মুখপাত্র ডা. জয়ন্ত সরকার বলেন, করোনায় মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলফাজ উদ্দীনের লাশ দাফন করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে দায়িক্ত দেওয়া হয়েছিলো। এখন তারা কেন গেলো না সেটা সম্পর্কে আমি অবগত নই।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, সরকারিভাবে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফনের দায়িত্ব ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে দেওয়া হয়েছে। সরকারি বেতনভাতা পাওয়া সত্ত্বেও তারা কেন লাশ দাফন করলনা সেটা জেলা প্রশাসককে অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।