ePaper

সরাইলে এশিয়া কাপে চলছে রমরমা ক্রিকেট জুয়া

মো. তাসলিম উদ্দিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সরাইল

জানা যায়, ২০১৫-১৬ সালের দিকে সরাইলে প্রকাশ্যে আসে ক্রিকেট জুয়ার বিষয়টি। শুরুতে হাসি তামাশা দিয়ে শুরু হয় বাজি ধরা। এরপর তা ক্রমেই পেশাদার জুয়ায় রূপ নেয়। বুধবার রাতে সরাইলের একটি চায়ের দোকানে বসে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ভুলের সমালোচনা করছেন একজন যুবক। বাংলাদেশ বনাম ইন্ডিয়া খেলার যেন প্রতিটি বলের হিসাব রয়েছে তার কাছে। পাশাপাশি এক ব্যবসায়ী জানালেন ওই ম্যাচে তার লোকসান হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীর কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি জানান, বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার ম্যাচকে ঘিরে দেশের পক্ষে ১০ হাজার টাকা বাজি ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশ দল হেরে যাওয়ায় ওই লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে। সরাইল উপজেলা সদর সহ গ্রাম সর্বত্রই চলছে রমরমা ক্রিকেট জুয়া। আগে কেবল শহর এলাকায় ক্রিকেট জুয়ার বাজি ধরতে দেখা গেলেও এখন মহামারি আকারে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া যুবক বিদেশ ফেরতসহ সব শ্রেণীপেশার মানুষ। এমনকি যারা নিরক্ষর তারাই বাজি ধরছেন এশিয়া কাপে, বা কোন ক্রিকেট খেলায়। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরছেন জুয়ারিরা। এই ক্রিকেট জুয়ার নেশায় পড়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। তবে স্থানীয় ডিলারদের ছত্রছায়ায় এই জুয়ার বাজি হয় মোবাইল ফোনে। ফলে এই জুয়া চক্র থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরাইল উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের দোকান ও মোড় থেকে শুরু করে  প্রত্যন্ত গ্রাম যেখানে ডিশের লাইন পৌঁছেছে সেখানেই এই জুয়ার দেখা মিলবে। বর্তমান এশিয়া কাপ, আইপিএল, বিপিএলসহ যে কোন ক্রিকেট খেলা শুরু হলেই গ্রাম কিংবা মোড়ের চায়ের দোকানে টিভিতে খেলা দেখার ধুম পড়ে যায়। এদের অধিকাংশ ভাল করে ক্রিকেট সম্পর্কে জানেই না। কেবল জানে চার, ছক্কা ও আউট। বাজি ধরতে ধরতে তারা ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে কিছুটা আয়ত্তও করেছে। বর্তমানে দুবাই চলছে এশিয়া কাপ। মানেই ক্রিকেট জুয়ারিদের ভরা মৌসুম। খেলা শুরু হলেই টিভির সামনে দেখা যায় জুয়াড়িদের আনাগোনা। স্থানীয়রা জানায়, প্রতি রাতে এই এলাকায় ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকার জুয়া চলে। ক্রিকেট জুয়ার পুরো ব্যবস্থায় থাকেন কয়েকজন বড় ডিলার। তারা দুই পক্ষের লোকজনের কাছে মোবাইলে অর্ডার নেয়। জুয়ায় বিজয়ীদের ঠিকমতো টাকাও পরিশোধ করে তারা। হাজারে ১০০ টাকা করে কমিশন নেয় এইসব ডিলার। জানা যায়, পর্দার পেছনে থেকে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এসব ডিলারদের কেউ কেউ এখন লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন। অপরদিকে জুয়া খেলে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী। জুয়ার নেশায় নগদ টাকা থেকে শুরু করে, বাড়ির আসবাবপত্র, স্ত্রীর গহনা পর্যন্ত দিয়ে বাজি ধরছে জুয়ারিরা। জুয়ার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে তাদের পরিবারের লোকজনও বিপাকে পড়েছেন। অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে পরিবারে। পুরো এলাকার মানুষের কাছে এখন জুয়া এক সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। এ ব্যপারে সরাইল থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী এ প্রতিনিধিকে বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে জুয়া খেলে তা শুনেছি তবে সঠিক তথ্য প্রমাণের অভাবে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না, তবে সরাইল থানার পুলিশ এই বিষয়ে সজাগ রয়েছে। অনুসন্ধান বলছে, জুয়ার অর্থ লেনদেনের জন্য এডমিনদের কাছে ১০ থেকে ১৫টি করে বিকাশ, রকেট ও নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার নাম্বার রয়েছে। বিকাশ, রকেট ও নগদের এজেন্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *