গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একটি প্রকল্পে একেকটি বটির দাম ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা করে।
এছাড়াও খাবার প্লেট, প্লাস্টিকের বাটি, চামচ ও চালের ড্রামের মতো ছোটখাট পণ্যেও অস্বাভাবিক বেশি দাম ধরা হয়েছে। বাড়তি দাম প্রাক্বলন করা হয়েছে চেয়ার, টেবিল ও সোফার মতো আসবাবের। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্ট টেলিভিশন, এসি ও ফ্রিজের মতো ইলেক্ট্রিক পণ্যের দামও ধরা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) অতিরিক্ত দামের এসব বিষয় উঠে এসেছে। ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি গত সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় এই চড়া দামে কেনাকাটা।
কেনাকাটায় রাইস ডিস ৩ হাজার, তরকারি ডিস ২ হাজার, নন-স্টিক ফ্রাই প্যান ৫ হাজার, বড় চামচ ১ হাজার এবং মাঝারি চামচ প্রতিটি ৫০০ টাকা করে ধরা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ছুরি ২ হাজার, বড় তরকারি কাটার কাচি প্রতিটি ২ হাজার, দুই চুলার গ্যাস স্টোভ ১০ হাজার, বঁটি প্রতিটি ১০ হাজার, শীল কড়ই কাঠের রুটি মেকার ৫ হাজার, শিলপাটা ৫ হাজার টাকা করে প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে।
দায় নিচ্ছে না কেউ!
প্রকল্পে একেকটি বটি ১০ হাজার টাকা দিয়ে কেনার প্রস্তাবনা কখন কীভাবে তৈরি হলো, কীভাবে বঁটি, চামচ, বয়াম জাতীয় রান্নার সামগ্রীর দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে নির্ধারণ হয়ে গেলো সেই দায় এখন আর কেউ নিচ্ছেন না। প্রস্তাবনায় স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা বলছেন, এত বড় প্রকল্পে অনেক ধরনের বড় যন্ত্রপাতির মধ্যে ছোট জিনিসের দাম বেশি ধরার বিষয়টি কীভাবে হলো তা এখন খতিয়ে দেখতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের বরাদ্দের জন্য প্রস্তাবনায় সই করেছেন পরিকল্পনা উইংয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান সুজয় চৌধুরী। তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করছি। এর সঙ্গে কারা সংশ্লিষ্ট হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অধিদফতর থেকেই আসে। অনেক পর্যায়ে এটি যাচাই-বাছাই হয়। এটা অনেক বড় প্রকল্প, এখানে অনেক আইটেম ছিল। ছোট ছোট আইটেমগুলোর দাম যেহেতু বেশি বলা হচ্ছে, আমরা বাজার দর দেখে যাচাই করার চেষ্টা করছি। এরকম বড় প্রকল্প দেশে এই প্রথম। এখানে অনেক কৃষি যন্ত্রপাতি আছে। এরমধ্যে ছোট ছোট কয়েকটি আইটেমের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দাম হয়তো এসেছে। এখন এখানে ভুল করে হয়েছে না কীভাবে হয়েছে এটা মন্ত্রণালয় দেখবে।
বাজার যাচাই না করে দাম প্রাক্বলন করায় সরকারের প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই কেনাকাটায় দুর্নীতি হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখার জামান বলেন, সরকারি অর্থায়নে এইসমস্ত প্রকল্প পরিচালিত হয়। অথচ সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশ এই প্রকল্পগুলোকে তাদের দুর্নীতি ও অবৈধ আয়ের লাইসেন্স হিসেবে ধরে নেয়। আর এক্ষেত্রে বেসরকারি ঠিকাদার ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে এই দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করে।