নিজস্ব প্রতিবেদক
সোমবার পুরনো ঢাকার চকবাজার এলাকায় “মুক্তমঞ্চ” এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। উক্ত সভায় মুক্তমঞ্চের সদস্য বৃন্দ যথাক্রমে- মো. আব্দুল হাই, মো. সিরাজ উদ্দিন, মো. সিকান্দার, মো. মণু মিয়া, মো. ফারুক, সাবিনা বেগম, জেসমিন আক্তার, মো. আব্দুল রশীদ, মো. সালেহ, মো. শামছুদ্দিন, মো. বাদল, মো. মিলন সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। মত বিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, বিগত ৫৪ বছরের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল ধরনের জটিলতা, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অবিচার প্রভৃতিকে নির্মূল করে, পরিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় সংস্কার করা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ব্যতীত তড়িঘড়ি করে দ্রুত শুধু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে, কোন একটি দলকে ক্ষমতায় আরোহন করানোর মধ্যে দিয়ে, রাষ্ট্রের কোন কল্যাণ নিশ্চিত হবে না। কেননা, অতীতেও বিভিন্ন অভ্যুত্থানের পর কোনো ধরনের মৌলিক সংস্কার ব্যতীত, তাড়াহুড়া করে নির্বাচন দিয়ে, রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ পরিনাম বয়ে এনেছিল তা আমরা ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে দেখেছি। সেই সাথে ২০০৯ সালেও অনুরূপ পরিনতি আমরা দেখেছি। অতএব, অতীতের বার বার এমন দুঃখজনক অভিজ্ঞতা সত্বেও, এখনো যদি আমরা সংস্কারের বাস্তবায়নের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারি, তাহলে, এটা হবে জাতির জন্য একটি আত্মঘাতিমুলক সিদ্ধান্ত। যার ফলে জাতির ভাগ্যে বয়ে আনবে মহা বিপর্যয়। বক্তারা আরো বলেন, আমরা এখানে উপস্থিত অনেকেই রয়েছি, যারা অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে আমরা বিভিন্ন কারণে নিজ নিজ রাজনৈতিক দল বর্জন করে সাধারণ জীবনে ফিরে গিয়েছিলাম। মতবিনিময় সভার অন্যতম বক্তা মো. আব্দুল হাই বলেন, আমি সহ এখানে উপস্থিত অনেকেই অতীতে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতাম, কিন্তু ২০০৯ সালে এবং ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি যেভাবে আওয়ামী লীগের সাথে মিলেমিশে লেজুড়বৃত্তির অপ-রাজনীতি করেছে, তাতে হতাশ হয়ে আমরা ২০১৭ সালের দিকে জাতীয় পার্টির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াই, অর্থাৎ আমরা এরশাদের জাতীয় পার্টির সমস্ত কর্মকাণ্ড থেকে ২০১৭ সালে সড়ে দাঁড়াতে বাধ্য হই এবং ২০১৭ সালের পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, আমরা রাজনীতিবিহীন অবস্থায় সাধারণ জনগণের ন্যায় জীবন যাপন করেছি। তবে ২০২৪ সালে যখন জুলাই আগস্ট আন্দোলন চলমান ছিল তখন ছাত্র জনতার পক্ষে তথা রাষ্ট্রের স্বার্থে আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করি এবং আমরা আমাদের মতো করে দায়িত্ব পালন করি। বক্তারা আরও বলেন, যেহেতু, আমরা সবসময়ই স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে, তাই আমরা ফ্যাসিজমকে মানতে পারিনি বলেই আমরা ২০১৭ সালেই আমাদের সেই সময়ের রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় পার্টি কেও ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করি নাই। তখন কারণ ছিল একটাই যে, জাতীয় পার্টি তখন আওয়ামী লীগের দোসরে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। তাই ২০১৭ সালে জাতীয় পার্টি ত্যাগ করে, আমরা আওয়ামী লীগের দোসর হওয়ার অপকর্ম থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করেছিলাম। অতপর, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে যেহেতু রাষ্ট্রের একটি পরিবর্তন হয়েছে, তাই আমরা চাই যে, ১০০% রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্পাদিত হওয়ার পরেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হউক। এতে রাষ্ট্র, জাতি এবং জনগণের মঙ্গল নিশ্চিত হবে। এতে করে জুলাই গনঅভ্যুত্থানের সকল শহিদদের আত্মা শান্তি লাভ করবে। সকল শহিদ, আহত ও পঙ্গুদের এবং আন্দোলনকারীদের সকল মহান ত্যাগ স্বার্থক হবে, অন্যথায় সকল ত্যাগ বিফলে যাবে। আলোচনা সভায় ২৪ এর গনঅভ্যুত্থানের সকল শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। সেই সাথে জুলাই গনঅভ্যুত্থানের সনদের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং এই আন্দোলনের প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোড়ালো দাবি জানানো হয়।
