ePaper

কাঁচামাল সস্তা হলেও কমছে না প্রাণিখাদ্যের দাম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

দেশের প্রাণিখাদ্য তৈরির কারখানাগুলোর প্রধান কাঁচামাল ভুট্টা। এই কাঁচামাল সস্তা হলেও কমছে না প্রাণিখাদ্যের দাম। ভুট্টা চাষ ক্রমাগত বাড়ছে। এখন প্রায় ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হচ্ছে দেশে উৎপাদিত ভুট্টা দিয়ে। প্রাণিখাদ্য তৈরির অন্য দুটি উপকরণ সয়ামিল ও ভিটামিন মূলত আমদানিনির্ভর। এ দুটি পণ্যের দামও বিশ্ববাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কিছুদিন পর থেকেই টানা নিম্নমুখী। তারপরেও দেশে কমছে না প্রাণিখাদ্যের দাম। খামারিদের অভিযোগ, দেশের কিছু কোম্পানি সিন্ডিকেট করে প্রাণিখাদ্যের বাজার চড়া দামে আটকে রেখেছেন। প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার এ বাজার হাতে গোনা কিছু কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। এ দেশে এখন পর্যাপ্ত কাঁচামাল রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও কমছে। তারপরেও তারা দাম না কমিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছে। বিপিএ মনে করে, তারা প্রতি কেজি ফিডে প্রায় ১০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করে।- বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে মুরগি, মাছ, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, পাখিসহ নানা ধরনের প্রাণিসম্পদের সংখ্যা ৪৫ কোটির বেশি। এর মধ্যে একটি উল্লেযোগ্য সংখ্যক প্রাণী বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হচ্ছে, যা প্রাণিখাদ্য বা ফিডের ওপর নির্ভরশীল। যে কারণে বছরে প্রায় ৮০ লাখ টন ফিড প্রয়োজন হচ্ছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত তিনশ কারখানায় বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন ফিড এবং অনিবন্ধিত আরও শতাধিক কারখানায় প্রায় পাঁচ লাখ টন ফিড উৎপাদিত হয়। আর্থিকভাবে এ বাজার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার। এ ফিডের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবহার হয় পোলট্রি খাতে। এছাড়া ২০ শতাংশ মৎস্য, ১৫ শতাংশ গবাদিপশু ও ৫ শতাংশ গৃহপালিত পশু এবং পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। ফিডের বাজার বড় হওয়ায় দেশে প্রতি বছর ভুট্টার উৎপাদনও বাড়ছে। স্থানীয় ভুট্টার মাধ্যমে ফিডশিল্পের ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয়। বাকি ৩০ শতাংশ চাহিদা পূরণে ভুট্টা আমদানি হচ্ছে। আমাদের কাঁচামালের একটি অংশ আমদানি করতে হয়। সেখানেও নতুন করে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বসানো হয়েছে। এছাড়া ডলার ও ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ার কারণে ফিডের দাম কমানো যাচ্ছে না।- ফিয়াবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. আহসানুজ্জামান কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, দেশে বছরে ভুট্টার উৎপাদন প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ লাখ টন। গত এক দশকে দেশে ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ২৭ লাখ ৫৯ হাজার টন। এক দশকের ব্যবধানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ লাখ ৮৪ হাজার টনে। যদিও ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ টন। এ ভুট্টার প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে প্রাণিখাদ্য হিসেবে। কারণ দেশে মানুষের খাদ্য হিসেবে ভুট্টা খাওয়ার প্রবণতা কম। প্রাণিখাদ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে আমরা কাজ করছি। এর আগেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নির্দেশনায় কিছু খাদ্যের দাম কমেছে। পাশাপাশি ফিডের যৌক্তিক দাম নির্ধারণে কাজ হচ্ছে।- প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শরিফুল হক ফিড মিল মালিকরা বলছেন, দেশে যখন ২০০৮ সালে ফিডমিলগুলোর প্রসার বাড়তে থাকে, তখন কাঁচামাল প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর ছিল। তখন দেশে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ১৫ লাখ টনের কম। তবে এখন উৎপাদন দ্রুত বাড়ায় প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ হচ্ছে দেশি ভুট্টা দিয়ে। তবে এর কোনো প্রভাব নেই প্রাণিখাদ্যের বাজারে। বরং দিন দিন ফিডের দাম বেড়েই চলছে। খাবারের পেছনে বাড়তি ব্যয়ের কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারিদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *