ইয়াকুব নবী ইমন, নোয়াখালী
নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সদ্য বিগত কমিটি বিলুপ্তির পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নতুন করে কমিটি গঠন না হওয়ায় কার্যত নেতৃত্বশূন্য রয়েছে জেলা ছাত্রদল। তবে কমিটি গঠন নিয়ে এমন কালক্ষেপণে হতাশ হওয়া ছাত্র নেতাদের মনের মেঘ কেটে যাবে খুব শীঘ্রই। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার প্রহর শেষে খুব সহসায় ঘোষণা আসছে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের কমিটি। এখন শুধু দেখার বিষয় কারা আসছেন নেতৃত্বে? দীর্ঘদিন ধরে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে যাওয়া পদ প্রত্যাশী ছাত্র নেতারা বলছেন, আমরা আর কত পরীক্ষা দেবো? এই মুহূর্তে আমাদের নেতৃত্বশূন্য জেলা কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদলকে পূর্ণতা দেয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এদিকে, খুব সহসাই নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের কমিটির ঘোষণা আসছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। তিনি বলেন, নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের কমিটি খুব সহসায় ঘোষণা হবে। সবকিছু চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই নেতাকর্মীদের অপেক্ষার অবসান হয়ে যাবে। এবং ত্যাগী যোগ্য যারা তারাই নেতৃত্বে আশার আভাস দিয়েছেন তিনি। ৬৪ জেলার মধ্যে দেশের রাজনীতিতে নোয়াখালী একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। একাত্তরের মুক্তি সংগ্রাম, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানসহ দেশের সকল ক্রান্তিকালে নোয়াখালী জেলার ভূমিকা অনবদ্য। সেই ঐতিহ্যবাহী জেলার একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এখানে দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রদলের কমিটি না থাকাটা সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা তৈরি ও স্বাভাবিক গতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার কারণ। অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ নোয়াখালী জেলা ছাত্রদল আজ সাংগঠনিক নেতৃত্বশূন্য। নেতৃত্বের পূর্ণতা দিতে এক ঝাঁক উদ্যমী ত্যাগী পরীক্ষিত ছাত্রনেতারা আজ প্রস্তুত ছাত্রদলের দায়িত্ব নিতে। যে ক’জন পদ প্রত্যাশী ছাত্র নেতারা রয়েছেন তারা সকলেই প্রকৃত মেধাবী ছাত্র এবং দলের জন্য নিবেদিত, ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিক, প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারের হামলা মামলার শিকার এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধা। সৌহার্দ্য সম্প্রীতির মেলবন্ধনে এগিয়ে চলা বর্তমান নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ নেতৃত্বের আকাঙ্খা গণতন্ত্রের সৌন্দর্যকে প্রতিষ্ঠিত করছে। তবে কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে আহত করে তুলছে এবং সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা ও দলীয় কর্মকাণ্ডের শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। তবে আশার কথা হল যে, শীঘ্রই কমিটি গঠনের মাধ্যমে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এদিকে, কে আসছেন নেতৃত্বে? কারা পাবেন দায়িত্ব? এ নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। কারণ সময়ের সেরা চার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি পদের জন্য লড়ে যাচ্ছেন সমান তালে। দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে তাদের সকলের রয়েছে অভিন্ন অবদান। যে কারণে নোয়াখালীতে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনে রয়েছে জটিল সমীকরণ। এ বিষয়ে পদ প্রত্যাশীরা তাদের অভিব্যক্তি পেশ করেছেন গণমাধ্যমের কাছে। নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি বর্তমান সভাপতি পদপ্রার্থী আনোয়ার হোসেন রকি বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছরের বেশি সময় ধরে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত সক্রিয় থেকে দলের সংকটময় সময়ে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং সংগঠনের স্বার্থে জেল-জুলুম, নির্যাতনসহ নানা ত্যাগ স্বীকার করেছি। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা আমাকে সভাপতি পদে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী করে তুলেছে। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী ও বর্তমান শহর ছাত্রদলের আহবায়ক ওয়াসিম বলেন, আমি ওয়ার্ড ছাত্রদল থেকে শুরু করে শহর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এবং বর্তমান আহবায়ক হিসেবে শহর এবং জেলায় সততা ও নিষ্ঠার সাথে সাংগঠনিক দায়িত্ব ও সকল আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছি। ১৭ বছর ধরে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে ৬ বার কারাবরণসহ ১৯ টা মামলার আসামী হয়েছি। আমার ত্যাগের মূল্যায়নে আমি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশা করি। নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক সভাপতি, বর্তমান জেলা ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী এন বি এস রাসেল অসুস্থ থাকায় তার সাথে বিস্তারিত আলাপন হয়নি। তিনি শুধু জানিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে আমার ভূমিকা ও দলের জন্য ত্যাগের মূল্যায়নে আমি সভাপতি পদে নেতৃত্ব প্রত্যাশা করি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ আছি সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। নোয়াখালী সদর উপজেলা ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি শাহেদ আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, বিগত দিনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে সম্মুখ সারিতে থেকে নোয়াখালী সদর উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছি এবং হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। গত ১৫ বছর দলের দুর্দিনে প্রতিটি কর্মসূচি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস্তবায়ন করেছি। জেলা ছাত্রদলের দায়িত্ব পেলে আগামীতে ছাত্রদলকে আরো সু-সংঘটিত করার জন্য কাজ করে যাবো। এদিকে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফ্যাসিস্ট বিরোধী রাজপথের আন্দোলনের পরীক্ষিত ছাত্রনেতারা, বিপ্লব সংগ্রামে ত্যাগী ও নির্যাতিত, সেই সেরা চার ছাত্রনেতারা হলেন, নোয়াখালী সদর উপজেলা ছাত্রদলের বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউর রহমান রাহান, নোয়াখালী শহর ছাত্রদলের বর্তমান যুগ্ম-আহবায়ক আশরাফুল করিম পাভেল, শহর ছাত্রদলের বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক তারেক নূর, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত শুভ। এছাড়াও জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে একক প্রার্থী হিসেবে জোরালো অবস্থানে রয়েছে নোয়াখালী শহর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল। নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী সাবেক সভাপতি আজগর উদ্দিন দুখু বলেন, যত দ্রুত সম্ভব জেলা কমিটি ঘোষণা করা উচিত। এর আগে, বিনা কারণে অপরিকল্পিতভাবে জেলা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন উপজেলায় স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড-ইউনিয়নের কমিটি গুলো শুধু বিলুপ্তই করা হচ্ছে। কিন্তু তা নতুনভাবে গঠন করার কোন উদ্যোগই নেয়া হচ্ছে না। সেই সুযোগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতা দ্বিগুণ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। তাই কালক্ষেপণ না করে ছাত্রদলের সকল স্তরের কমিটি গঠন করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা জরুরী। এদিকে ছাত্রদল বিষয়ে কথা হয় নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের আরো এক সাবেক সফল সভাপতি নুরুল আমিন খানের সাথে, তিনি জানান, দীর্ঘদিন ছাত্রদলের কমিটি না থাকায় দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ছাত্রদল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনে পরীক্ষিত ত্যাগী ও সার্বিক যোগ্যতার মাপকাঠিতে যেন উচ্চ শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তা না হলে মেধাশূন্য নেতৃত্ব দিয়ে আগামীর জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি মোকাবেলায় পিছিয়ে পড়বে ছাত্রদল।
