ePaper

এশিয়া কাপে কেমন করবে বাংলাদেশ? দুর্বলতা খুঁজে পাচ্ছেন না আশরাফুল, পেসারদের নিয়ে আশাবাদী ডোনাল্ড

ক্রীড়া ডেস্ক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরবর্তী আসর মাথায় রেখে এবারের টুর্নামেন্ট হবে ২০ ওভারের ফরম্যাটে। যাতে বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। স্বাভাবিকভাবেই এশিয়ার দলগুলোর কাছে প্রস্তুতির সেরা মঞ্চ এশিয়া কাপ। এশিয়া কাপ মানেই বাড়তি উন্মাদনা। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো এশিয়ার পরাশক্তিদের সঙ্গে লড়াইয়ের মঞ্চে আছে বাংলাদেশও। যদিও ফাইনালে গিয়েও এখনো শিরোপার স্বাদ পায়নি টিম টাইগার্স। গেল কয়েক বছর ধরে ভালো করছে আফগানিস্তানও। ফরম্যাট ও ভেন্যু বিবেচনায় এবারের টুর্নামেন্টেও তারা অন্যতম ফেবারিট।  এবারের আসরে টাইগাররা কেমন করবে—সে প্রশ্ন এখন সবার। যদিও প্রস্তুতিটা মন্দ হয়নি। টানা তিন সিরিজ জিতে দুবাইয়ের বিমানে চড়েছে লিটন দাসের দল। অন্য বারের তুলনায় এবারের দলটিকে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ বলা যায়। লিটন দাসের ওপর ভরসা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট, দলের নেতৃত্বে আছেন তিনিই—মাঠের পাশাপাশি ড্রেসিংরুমেও দলকে উজ্জীবিত করার দায়িত্বটাও তার। বোলিং বিভাগে তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমানের পেস আক্রমণ প্রতিপক্ষকে যে কোনো সময় চাপে ফেলতে পারে। পাশাপাশি নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেনদের স্পিন জুটি মধ্য ওভারে নিয়ন্ত্রণ রাখার বড় অস্ত্র। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—চাপের ম্যাচে কতটা ঠাণ্ডা মাথায় খেলতে পারবে টাইগাররা? অতীতে বড় টুর্নামেন্টে বারবার সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালের দোরগোড়ায় গিয়ে হোঁচট খাওয়ার ইতিহাস আছে। এবার কি ভিন্ন কিছু দেখাতে পারবে বাংলাদেশ?গ্রুপ পর্ব পার হওয়া বাংলাদেশের জন্য খুব কঠিন কিছু নয়। তবে শিরোপার দৌড়ে থাকতে হলে ধারাবাহিকতা ও মানসিক দৃঢ়তা দেখাতে হবে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও উন্নতি জরুরি। সঠিক দিনে সঠিক ক্রিকেট খেলতে পারলে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে চমক দেখাতে পারে। তবে সেই ‘চমক’ নির্ভর করছে শুরুর ম্যাচগুলোয় আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার ওপর। বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিন পরিচিত মুখ, সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল, সাবেক কোচ অ্যালান ডোনাল্ড ও বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু। কেমন করবে বাংলাদেশ এমন প্রশ্নে আশরাফুল বলেন, ‘এশিয়া কাপে এশিয়ার সেরা দলগুলো খেলে। এটা কঠিন টুর্নামেন্ট। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে আমরা দুই বার টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে ফাইনালে খেলেছি। এটা একটা পজিটিভ দিক আমাদের জন্য, সবাই যদি ভালো খেলি তো অবশ্যই ভালো করা সম্ভব। অন্তত দ্বিতীয় রাউন্ড আশা করতেই পারি।’

এই মুহূর্তে আসলে দুর্বলতা খুব একটা চোখে পড়ছে না। আমরা সবশেষ কয়েকটা ম্যাচ জিতেছি টি-টোয়েন্টিতে। খারাপ করলে চোখে পড়ে, ভালো করলে আসলে চোখে পড়ে না তারপরও কিছু বিষয় রয়েছে সেগুলো কাটিয়ে উঠলে ভালো করা সম্ভব।

মোহাম্মদ আশরাফুল

বর্তমান দলটির দুর্বলতা চোখে পড়ছে না আশরাফুলের। তিনি বলেন, ‘এই টিমে এই মুহূর্তে আসলে দুর্বলতা খুব একটা চোখে পড়ছে না। আমরা সবশেষ কয়েকটা ম্যাচ জিতেছি টি-টোয়েন্টিতে। খারাপ করলে চোখে পড়ে, ভালো করলে আসলে চোখে পড়ে না তারপরও কিছু বিষয় রয়েছে সেগুলো কাটিয়ে উঠলে ভালো করা সম্ভব।’

আশরাফুল বলছেন টপ অর্ডারের ওপর দায়িত্ব বেশি, ‘দেখুন বিশেষ করে ওপেনারদের জন্য আসলে বড় চ্যালেঞ্জ। টপ অর্ডার যারা তাদের অনেক ভালো কিছু করতে হবে। ওদের থেকে আশা বেশি থাকে ওরা যদি ভালো করতে পারে তাহলে দলের জন্য সহজ হয়ে যায়। সবশেষ কয়েকটি সিরিজে কিস্তু টপ অর্ডার ভালো করেছে, বিশেষ করে তামিম ইমন বা লিটন সবাই ফর্মে রয়েছে।’হৃদয়সহ বাকিদের নিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘মিডল অর্ডারে ভালো ফর্মে রয়েছে দল। শামীম পাটোয়ারী, জাকের আলী অনিক, নুরুল হাসান সোহান তারা ভালো ফর্মে রয়েছেন। তবে হৃদয় কিন্তু খুব একটা ভালো ফর্মে নেই রিদমে নেই। যারা দলে রয়েছে তারা অনেক অভিজ্ঞ। অনেকে দশ বছর খেলছে লিটন- মুস্তাফিজ-সোহান এখন যারা আছে তারাও তো অনেক অভিজ্ঞ। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের পেস আক্রমণ বেশ শক্তিশালী। জাতীয় দলের সাবেক কোচ ও কিংবদন্তি ক্রিকেটার অ্যালান ডোনাল্ডও আশাবাদী সাবেক শিষ্যদের পেস বিভাগ নিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গ থেকে ঢাকা পোস্টকে তিনি জানিয়েছেন এশিয়া কাপ নিয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা। শুরুতে নিজের ব্যস্ততা প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘প্রি-সিজন নিয়ে ব্যস্ত আছি। ডারউইন যেতে হচ্ছে চার প্রদেশের টি-১০ প্রতিযোগিতার জন্য। আমি এর আগে কখনো টি-১০এ যুক্ত ছিলাম না। আশা করি উপভোগ্য হবে। এশিয়া কাপে টাইগারদের বোলিং আক্রমণের কথা বললে, অভিজ্ঞ ৩ জন পেসার এক অর্থে ইঞ্জিনরুম। তাসকিন, শরিফুল, মুস্তাফিজ।’‘আর এই দলে যদি আমাকে আর একজনকে যুক্ত করতে হয়, আমি সবসময় নাহিদ রানাকে যুক্ত করবো। আমি জানি না, সে কি ইনজুরি নাকি তাকে দলে নেওয়া হয়নি। যাই হোক, জানি না বয়সে তরুণ বলে তাকে শুধু লাল বলে বিবেচনা করা হচ্ছে কি না। আমি তাকে ইম্প্যাক্টের জন্য অবশ্যই আমার সাদা বলের দলে জায়গা দেবো।’‘ইংল্যান্ডের সাদা বলের দলে মার্ক উডকে নিয়ে যেমন হয়, এটা কেবল আগ্রাসী বল করা এবং দলের ভেতর ইম্প্যাক্ট রাখার কাজ। আমার মনে হয়, আধুনিক যুগে এমনই হওয়া উচিত। আপনার যদি তেমন বোলার থাকে, তাদের ব্যবহার করা দরকার। তাই আমি জানি না, নাহিদকে শুধু লাল বলের জন্য বিবেচনা করছে কি না। যেহেতু তার বয়স এখনও কম। আমার মতে নাহিদ রানা খুবই এক্সাইটিং।’

একইসঙ্গে হাসান মাহমুদকে নিয়ে ডোনাল্ড বলেন, ‘আমি এখানে হাসান মাহমুদকেও দেখিনি। মনে হচ্ছে আপাতত সে বিবেচনার বাইরে। আপনি যদি হাসান মাহমুদ এবং নাহিদ রানাকে যোগ করেন, তবে দারুণ আক্রমণ হবে। আমি জানি, সবাইকে একসঙ্গে নেয়া সম্ভব না। দুবাইয়ে এশিয়া কাপের জন্য শুভকামনা জানাই, দল ভালো করবে প্রত্যাশা রাখছি।’এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু বলেন, ‘আপাতত প্রথম লক্ষ্য তো আসলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা। এটা নিয়ে আমরা আসলে আশাবাদী। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান আছে তারা ভালো দল। তাদের সাথে আমাদের জিততে হবে আগে, দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে হবে। তারপর আসলে ফাইনাল খেলার চিন্তা রাখতে হবে।’‘দল যদি ভালো খেলে আমাদের আশা তো আরো বাড়ে। দলে এখন কিছু নতুন ক্রিকেটার রয়েছে, চাই না তাদের ওপর বাড়তি প্রেসার দেয়া হোক। তবে আশা রাখছি ভালো কিছু হবে। দল শেষ কয়েকটি সিরিজ জিতেছে কম্বিনেশন ভালো, তরুণ ক্রিকেটাররা আছে সবদিক থেকে আশাবাদী।’মিঠুর দাবি সব বিভাগে ভালো করতে হবে তাহলে জয় নিশ্চিত হবে, ‘শেষ কয়েকটি সিরিজে কিন্তু প্রতিটা বিভাগে আমাদের ক্রিকেটাররা ভালো খেলেছে। এমন ভালো যদি সব বিভাগে খেলতে পারে তাহলে আমরা ম্যাচ জিততে পারবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *