ePaper

ডাকসু নির্বাচন আগামীকাল: থাকছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা

মির্জা সিনথিয়া

সব আলোচনার আর উৎকণ্ঠা প্রহর শেষে এবার অপেক্ষা ভোট উৎসবের। আগামীকাল সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির কথা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে যেকোনো পদক্ষেপে নেবে পুলিশও। চব্বিশের ৫ আগস্টের পর গণতন্ত্রে ফেরার যে তীব্র আকাক্সক্ষার সৃষ্টি হয়েছে ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে তার প্রথম লিটমাস টেস্ট। ক্যাম্পাসের উত্তাপ, গণমাধ্যমে আলোচনা সবমিলিয়ে আজ দেশবাসীর চোখ থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিছু শিক্ষার্থী অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শঙ্কা করছেন ভোটের দিন বিশৃঙ্খলার। আবার অনেকে বিশেষ করে যারা নতুন ভোটার তাদের শঙ্কার চেয়ে উৎসাহ বেশি। শিক্ষার্থীরা বলেন, আগে তো ভয়ভীতি থাকতো নির্বাচনে কোনো মারামারি হবে কিনা। জাতীয় নির্বাচনে আমরা এখন পর্যন্ত ভোট দিতে পারিনি। ডাকসুতে ভোট দিতে পারবো সেজন্য আমরা সন্তুষ্ট। আমরা আশা করছি এবার খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবো।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুত তারা। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় থাকবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধান, আর সহযোগিতা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, আমাদের পুরো বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তার চাদরে ডেকে রাখা আছে। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী এ দুটা পক্ষই যথেষ্ট। বহিরাগতরা এসে যেন এখানে কোনো সহিংসতা করতে না পারে সেজন্য পুলিশের সহযোগিতা প্রয়োজন। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, ডাকসু নির্বাচন ঘিরে যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা অস্থিরতা মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত। ডিএমপির ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর আশপাশের এলাকায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার যে কার্যক্রম সেগুলো কার্যকর রয়েছে। এবং ডাকসু নির্বাচনের পূর্বে, নির্বাচনের দিন এবং পরের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্থিতিশীল থাকে তার জন্য আমরা কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকলেও, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ভোট যেন সত্যিকার অর্থেই পরিণত হয় গণতান্ত্রিক উৎসবে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আজ অবশ্যই প্রত্যাশা করি একটা সুস্থ স্বাভাবিক নির্বাচন হবে। যেই হারুক বা যেই জিতুক একটা সৌহাদ্যপূর্ন সম্পর্ক যেন সবার মধ্যে থাকে এটাই প্রত্যাশা।
ডাকসু নির্বাচনে গতকাল রাত ৮টা থেকে ৩৪ ঘণ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশপথ সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। আজ সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিরতীহীনভাবে নেয়া হবে ডাকসু ও হল সংসদের ভোট।
থাকছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কেন্দ্রীয় কমিটি ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আজ সোমবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণের দিনসহ পরের দিন বুধবার পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। টিএসসি মোড়ে তৈরি করা হয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। সোমবার রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলে আশা করি। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তিন স্তরের নিরাপত্তায় কাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানায়, পুরো এলাকায় টহল ও ভোটকেন্দ্রে সামনে পুলিশের অবস্থান রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে কোনো ব্যাঘাত যেন না ঘটে, সেদিকে সার্বক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সজাগ রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা ডাকসু নির্বাচন কমিশনের (ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা) তত্ত্বাবধানে নির্বাচনে নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে। ভোটাররা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পারেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশক্রমে পুলিশ সেসব কাজেও সজাগ থাকবে। নির্বাচনের দিন বিশৃঙ্খলা করার কেউ চেষ্টা করলেই আইনগতভাবে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত থাকে, সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। গত সোমবার ডিএমপি সদরদপ্তরে সার্বিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ডাকসু নির্বাচন ভণ্ডুলের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *