মোহাম্মদ আলী, ভোলা
ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসার মুহাদ্দিস, ভোলা সদর উপজেলা জামে মসজিদের খতিব ও ইসলামি ঐক্য আন্দোলনের ভোলা জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মো. আমিনুল হক নোমানী (৪৫) কে দুর্বৃত্তরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। শনিবার রাত আনুমানিক পৌনে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের চরনোয়াবাদ সংলগ্ন নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ওই রাতে কয়েকজন দুর্বৃত্ত মাওলানা নোমানীর বাসায় প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাওলানা আমিনুল হক নোমানী, স্থানীয়ভাবে একজন খ্যাতিমান আলেম ছিলেন। তিনি শুধু ভোলা সদর উপজেলা জামে মসজিদের খতিবই নন, বরং ইসলামি ঐক্য আন্দোলনের ভোলা জেলা সেক্রেটারি, জেলা ইমাম সমিতির সহ-সভাপতি এবং ভোলা জেলা মুসলিম ঐক্য পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডে এলাকায় গভীর শোক নেমে আসে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি (ফাঁসি) দাবি করেছে। মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে তারা বলেনÑমহান আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দিন। ঘটনার পর রাত ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তিন দফায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষ। তারা ভোলা সদর হাসপাতাল চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের যুগীরঘোল হয়ে কে-জাহান মার্কেট পর্যন্ত পদযাত্রা করে। পরে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন। তা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা। গতকাল রোববার দুপুর ২টায় ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে মরহুম নোমানীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মানুষ সেখানে অংশগ্রহণ করে তাকে শেষ বিদায় জানান। জানাজা শেষে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মাওলানা আমিনুল হক নোমানী হুজুর এর জানাজা থেকে তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা হয়। আগামী ০৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং রোজ সোমবার, ভোলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা বন্ধ থাকবে। বিক্ষোভ সমাবেশ, শোক র্যালি এবং জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তি কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এদিকে পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই অভিযুক্তদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। খুব শিগগিরই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ভোলা সদর মডেল থানার ওসি।
