ePaper

শাহজাদপুরে এক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে দাবিদার দুজন

রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জে শাহজাদপুরের ঘোড়শাল আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ দুইজন দাবি করছেন। এতে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলা থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বেলতৈল ইউনিয়নের ঘোড়শাল আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়টি দ্বিতল ভবনসহ রয়েছে আধাপাকা অবকাঠামো। কাগজে-কলমে ৩শ’ শিক্ষার্থী থাকলেও সব শ্রেণি মিলে উপস্থিত মাত্র ১৪ জন শিক্ষার্থী। এর বিপরীতে আটজন শিক্ষক এবং তিনজন অফিস স্টাফ রয়েছেন। এরমধ্যে আবার প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পদের দাবিদার দুই সহকারী শিক্ষক। ইতোমধ্যে আগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলেয়া খাতুনের চেয়ার টেবিল পাশের ধান ক্ষেতে ফেলে দিয়ে আব্দুর রহমান নামের একজন সহকারী শিক্ষক নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবি করে নিজে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে শাহজাদপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাগজে কলমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এখনো আলেয়া খাতুন। তবে হাইকোর্টের মাধ্যমে আরেকটি পক্ষ এই পদ দখলের চেষ্টা করছেন। সরেজমিনে ঘোড়শাল আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, নবম শ্রেণিতে মাত্র ২ জন, ৮ম শ্রেণিতে ৬ জন, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ জন মিলে মোট ১৪ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। বাকী শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থী না থাকলেও বিদ্যালয়ের স্টাফরা স্টাফরুমে গল্পে মশগুল। সময়মত ঘন্টা বাজলেও শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছেন না কেউ। শিক্ষক স্টাফরুমে কয়েকেজন শিক্ষকের পাশেই আলাদা চেয়ার টেবিল নিয়ে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবি করে বসে আছেন আব্দুর রহমান। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান অবসরে যাওয়ার আগে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তার স্ত্রী আলেয়া খাতুনকে দায়িত্ব অর্পণ করে যান। তবে আলেয়া খাতুন প্রশাসনিক এবং দাপ্তরিক কাজে অযোগ্য। তাই বিদ্যালয়কে টিকিয়ে রাখতে তাকে সরিয়ে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে সবাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যাক্ত কক্ষে খুঁজে পাওয়া গেল আলেয়া খাতুনকে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানান, তার সই বিদ্যালয়ের সব কাজ হলেও তার চেয়ার-টেবিল পাশের ধান ক্ষেতে ফেলে দিয়ে সেখানে নতুন চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসেছেন বিদ্যালয়ের আরেকজন সহকারী শিক্ষক। এমনকি শিক্ষক স্টাফদের কক্ষেও তাকে বসতে দেওয়া হয় না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ে কয়েকজন স্টাফ নিয়োগ হবে অচিরেই। সেই নিয়োগে বাণিজ্য করার অসৎ উদ্দেশ্যেই সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারীভাবে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবি করছেন ওই ব্যক্তি। ইচ্ছামত ম্যানেজিং কমিটি করে নিয়োগের নামে প্রহসন করে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই এমন হীন কাজে লিপ্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এই শিক্ষক। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম শাহাদৎ হোসেন জানান, আলেয়া খাতুন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেও শুনেছেন হাইকোর্টের রায় নিয়ে আব্দুর রহমান নামের একজন সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদ দাবি করছেন, যদিও তিনি এখন পর্যন্ত রায়ের কপি পাননি। এদিকে প্রধান শিক্ষক পদে দুইজন দাবিদারের ঘটনাটি কেন্দ্র নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে, যেকোন সময় বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকাবসী আশঙ্কা করছেন। তবে এলাকাবাসীর দাবি, আলেয়া খাতুন একজন ভালো শিক্ষক। তার স্বামীর হাতে গড়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার স্বামী ছিল এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। তাদের জন্য আজকে এই গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *