ePaper

রূপগঞ্জে ওয়ান থাউজেন্ড প্রজেক্ট-এ বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি  ইউএনও-এর উদ্ভাবনী উদ্যোগে এক হাজার পরিবার এখন স্বাবলম্বী

মো. শাহজাহান মিয়া (নারায়ণগঞ্জ) রূপগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত ‘ওয়ান থাউজেন্ড প্রজেক্ট’ এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শতাধিক নারী-পুরুষ, তরুণ ও শিক্ষার্থী আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। প্রকল্পটি গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতা এবং দারিদ্র্য বিমোচনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিত। প্রশিক্ষণ থেকে কর্মসংস্থানÑপ্রকল্পের সম্ভাবনার গল্প। সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত এই প্রকল্পের আওতায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, সেলাই, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রিশিয়ান কাজ, কম্পিউটার ও অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় উপকরণ, প্রাথমিক মূলধন এবং ব্যবহারিক নির্দেশনা, যাতে তারা প্রশিক্ষণ শেষে সরাসরি আয়ের কাজে প্রবেশ করতে পারেন।

বাস্তব জীবনের সাফল্যের গল্প: শান্তা আক্তার মুড়াপাড়া ইউনিয়ন, মঙ্গলখালী গ্রাম শান্তা এক গৃহিণী, যিনি সংসারে টানা অভাব অনটনে দিন যাপন করতেন। তার স্বামী ইয়াছিন ঢাকার একটি বেকারিতে কাজ করতেন, কিন্তু সংসার চালানো কঠিন ছিল। কিন্তু প্রানিসম্পদ দপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তাঁর বাড়িতেই তিন শতাধিক হাঁস-মুরগি পালন করে মাসে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা আয় করেন। সংসারের আর্থিক দিক থেকে তারা এখন অনেকটাই স্বচ্ছল।

ইয়াসমিন আক্তার: প্রাথমিক পর্যায়ে প্রশিক্ষণহীন খামার করার ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন, তবে প্রশিক্ষণ নিয়ে পুনরায় শুরু করে টিকা চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো লাভ করছেন এবং এখন আর অভাব নেই।

রিনা বেগম: গরু পালনের প্রশিক্ষণ শেষে একটি দুগ্ধ গাভী থেকে প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করছেন এবং সন্তানদের শিক্ষার খরচ সামলাচ্ছেন।

আফরোজা ইসলাম (ভিংরাবো): বিউটি পার্লারের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ঘরে বসে শুরু করেছেন ব্যবসা, মাসে ১২-১৫ হাজার টাকার আয় হওয়ার পাশাপাশি বহু নারী তার কাছে সাজগোজের জন্য আসেন।

মিথিলা: বিউটি পার্লারের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং দুই নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিও করছেন।

হাসিনা বেগম (ভুলতার): সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে সেলাই মেশিন পেয়ে এখন ঘরে বসেই মাসে ১৫ হাজার টাকার বেশি আয় করছেন।

ফাহিম হোসেন: ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে অনলাইনে মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকার আয় করছেন। তিনি ভবিষ্যতেও বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করছেন।

ইউএনও সাইফুল ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি: আমাদের ‘ওয়ান থাউজেন্ড প্রজেক্ট’ মূলত এক হাজার পরিবারকে স্বাবলম্বী করার একটি পরিকল্পনা বলেন ইউএনও সাইফুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, আমরা চাই মানুষ যেন শুধুমাত্র সাহায্যের ওপর নির্ভর না করে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজে থেকে আয় করতে পারে এবং অন্যদেরও কাজের সুযোগ দিতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে ২৯০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের হাতে প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক মূলধন, প্রয়োজনীয় উপকরণ তুলে দেওয়া হয়। প্রকল্পে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে যাতে যেকোনো সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যায়। ইউএনও আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য এককালীন আর্থিক সাহায্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে সচ্ছলতা এবং কর্মসংস্থান গড়ে তোলা। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, প্রকল্পটি ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।

স্থানীয় সমাজে প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব: এই প্রকল্প শুধু নির্দিষ্ট পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নয়ন করছে না, বরং সামগ্রিকভাবে রূপগঞ্জ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা সৃষ্টি করছে। নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী ও শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করছেন, নিজেদের পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জন করছেন এবং এক নতুন কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি হচ্ছে। রূপগঞ্জের গ্রামগুলোতে এখন অভাব-অনটনের চেয়েও বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে আত্মবিশ্বাস, উন্নতি ও সামাজিক পরিবর্তনের গল্প। ইউএনও সাইফুল ইসলামের এই উদ্যোগকে দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির এক আদর্শ মডেল হিসেবে প্রশংসিত করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *