ePaper

নরসিংদীতে লক্ষ টাকার বেসিন ৭ মাসেই অকেজো প্রশাসনের উদাসীনতায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

শফিকুল ইসলাম মতি, নরসিংদী

নরসিংদীতে এখন জনসাধারণের কোনো কাজেই আসছে না করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ও জনসচেতনতা বাড়াতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাত ধোয়ার বেসিনগুলো। নির্মাণের মাত্র সাত মাসের মধ্যেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট ও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অধিকাংশ বেসিন। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো এসব বেসিন এখন পরিণত হয়েছে আবর্জনার স্তূপে। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ থাকলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে, করোনা সহ অন্যান্য সংক্রমণ রোগ-ব্যাধি ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখন সাধারণ মানুষকে নিয়মিত হাত ধোয়ায় অভ্যস্ত করতে গত বছরের এপ্রিলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, নরসিংদী এই মহৎ উদ্যোগটি গ্রহণ করে।  জেলার বিভিন্ন জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় ৪০টি হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলাতেই স্থাপন করা হয় ১২টি বেসিন।  প্রতিটি বেসিন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা।  সেই হিসাবে শুধু সদর উপজেলাতেই সরকারের খরচ হয়েছে তিন লক্ষ আটষট্টি হাজার টাকা। পুরো জেলায় এই প্রকল্পের ব্যয় ছিল আরও অনেক বেশি। প্রকল্পের উদ্দেশ্য মহৎ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সংশ্লিস্টরা। গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে নরসিংদী জেলার হাসপাতাল, পৌর ভবন, আদালত চত্বর, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও রেলস্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে দেখা যায়, বেশিরভাগ বেসিনই এখন অকেজো। কোথাও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন, কোথাও কল ভাঙা, আবার কোথাও ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। যে কয়েকটি বেসিন নামমাত্র ব্যবহারযোগ্য রয়েছে, সেগুলোতে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশের কোনো ব্যবস্থা নেই।  ফলে, অ-পরিষ্কার ও পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় সাধারণ মানুষ এগুলো এখন ব্যবহার করতে পারছেন না। এতে সরকারের একটি জনবান্ধব উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রথমদিকে বেসিনগুলো মানুষের উপকারে আসলেও, কিছুদিন পর থেকেই এগুলোর তদারকি বন্ধ হয়ে যায়।  সাবানসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ না থাকায় ও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ধীরে ধীরে মানুষ এগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়।  জনগণের করের টাকায় নির্মিত এসব স্থাপনা যদি কাজেই না লাগে, তবে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করার কোনো মানেই হয় না বলে অভিযোগ তাদের। এতে কেবল সরকারি অর্থের অপচয়ই হয়েছে। তারা দ্রুত এসব বেসিন মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করার ও নিয়মিত সাবান সরবরাহের দাবি জানান তারা। এই বিষয়ে জানতে চাইলে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বেশিরভাগ কর্মকর্তারা বেসিনগুলোর নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করলেও, ক্যামেরার সামনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নরসিংদী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজওয়ান হোসেন, বিষয়টি স্বীকার করলেও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য এড়িয়ে যান।  কর্তৃপক্ষের এমন নীরব ভূমিকা প্রমাণ করে যে, তারা এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে কতটা উদাসীন। শুধুমাত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করাও প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।  জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নির্মিত এসব বেসিন দ্রুততম সময়ে মেরামত করে পুনরায় চালু করার পাশাপাশি এর নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থ্য গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায়, করোনা মোকাবেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মনে করেন নরসিংদীবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *