ePaper

খুলনায় ব্যবসায়ীকে মাটিতে পুঁতে রেখে ৪ কোটি টাকা আদায় বিএনপি নেতা জনি গ্রেপ্তার

মো. নাজমুল হুদা, খুলনা

যশোরের অভয়নগরে ব্যবসায়ীকে মাটিতে পুঁতে রেখে ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের আলোচিত মামলার অন্যতম আসামি ও নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির (পদ স্থগিত) সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনিকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। বুধবার রাতে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের আবাসিক হোটেল ‘রোজ গার্ডেন-২’ থেকে তাকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে অভয়নগর থানা পুলিশের কাছে জনিকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম। তবে ওসি আব্দুল আলিম বলেন, “আমরা জনিকে বুঝে পেয়েছি। তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।” ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে জনির সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়। কিন্তু এরপরও তিনি এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর সকালে ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে কৌশলে ডেকে নিয়ে যান সৈকত হোসেন ওরফে হিরা। জনির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আটকে রেখে তাকে মারধর করা হয় এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২ কোটি টাকা দাবি করা হয়। বাধ্য হয়ে টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন সাউথ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে জনির প্রতিষ্ঠানের হিসাবে অর্থ পাঠান। একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে ফের টিপুকে আটক করা হয় নওয়াপাড়া কনা ইকোপার্কে। অভিযোগ রয়েছে, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন দপ্তরীসহ কয়েকজন মিলে তার বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালুচাপা দিয়ে রাখেন। মুক্তির জন্য আরও ২ কোটি টাকা দাবি করা হয়, যার মধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে এক কোটি টাকা পরিশোধ এবং বাকি এক কোটি টাকার দুইটি চেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়া হয়। আসমা খাতুন বলেন, “বিএনপি নেতা জনি ও সাংবাদিক মফিজের নেতৃত্বে কয়েকজন আমাদের কাছ থেকে কয়েক দফায় ৪ কোটি টাকা নিয়েছে। আমার স্বামী এখন ভয়ে এলাকা ছাড়া। আমরাও চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।” ঘটনার বিচার চেয়ে গত ৩১ জুলাই অভয়নগরের রাজঘাট সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন আসমা খাতুন। অভিযোগের ভিত্তিতে সেনা সদস্যরা প্রাথমিক তদন্ত চালান এবং স্থানীয় পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। পুলিশ এ ঘটনায় একাধিক মামলা রুজু করে এবং পলাতক আসামিদের ধরতে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। গতকাল বৃহস্পতিবার জনিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনার পর অভয়নগর ও নওয়াপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে, তবে আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে তারা স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছিলেন না। স্থানীয়রা দ্রুত বিচার আইনে মামলার কার্যক্রম সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *