ইয়াকুব নবী ইমন, নোয়াখালী
নোয়াখালীতে গত জুলাই মাসজুড়ে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত, ফেনীর মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে নোয়াখালীতে পানি প্রবেশ করায় গত এক মাসের স্থায়ী জলাবদ্ধতায় হাজার হাজার পরিবার বর্তমানে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। জেলার অধিকাংশ সড়ক ও বাড়িঘর এখনো পানিতে ডুবে আছে। এতে করে পানিবন্দি মানুষের জনদৃর্ভোগ চরমে পৌঁছেচে। এখনো জেলার কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ ও হাতিয়া উপজেলার নিচু এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে জলাবদ্ধতা রয়েছে। তবে কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ ছাড়াও বেগমগঞ্জের অধিকাংশ এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা বেশি। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন টানা জলাবদ্ধতায় তাঁরা বর্তমানে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। এদিকে, বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে নোয়াখালীবাসীকে রক্ষায় জেলার চৌমুহনী শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গুরুত্বপুর্ন খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত ও পরিষ্কারসহ বাঁধকেটে পানি চলাচল স্বাভাবিক করনের কাজ চলমান রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিশেষ করে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার পরিবার পানিবদ্ধি হয়ে বর্তমানে মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে দ্রুত মুক্তি চায় বেগমগঞ্জবাসী। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় গত এক মাস ধরে চলছে জলাবদ্ধতা। ডুবে আছে সড়ক, বসতঘর, স্কুল, মসজিদসহ জনজীবনের প্রায় সবকিছু। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর পানি। নৌকা ও বাঁশের সাঁকোই এখন চলাচলের ভরসা। প্রশাসনের উদ্যোগ সত্ত্বেও কিছুতেই এ জনদুর্ভোগ কমছে না। এদিকে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাতে নোয়াখালীর বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ সড়ক ও বাড়িঘর ডুবে গেছে। আগের পানি নামতে না নামতেই নতুন বৃষ্টিতে আবারও পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে শুক্রবার দিনবরসহ গত একমাস ধরে থেমে থেমে মুশলধারে বৃষ্ট্রিতে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার অধিকাংশ সড়ক ও বাড়িঘর আবারো ডুবে গেছে। এতে করে হাজার হাজার পরিবার পানিবদ্ধি হয়ে বর্তমানে মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে দ্রুত মুক্তি চায় নোয়াখালীবাসী। জানা গেছে, চলতি জুলাই মাসে একাধিকবার টানা বৃষ্টির ফলে জেলার গ্রামাঞ্চলে ও পৌর এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আগের পানি নামতে না নামতেই নতুন বৃষ্টিতে আবারও পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। জলাবদ্ধতার কারণে বিপাকে পড়েন অফিস-আদালতের কর্মজীবী, ব্যবসায়ী ও পথচারীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা শহরগুলোতে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব, খাল-জলাশয় এবং পোল কালভার্ডগুলোর মুখভরাট হয়ে দ্রুত পানি সরতে না পারার কারণেই এই দুর্ভোগ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। বিশেষ করে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর, চৌমুহনী পৌরসভা, হাজীপুর, রসুলপুর, বেগমগঞ্জ, মিরওয়ারিশপুর, জিরতলী, শরীফপুর, কুতুবপুর ও কাদিরপুর এলাকার অনেক গ্রামীণ সড়ক ডুবে গেছে ও বসতবাড়িতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। হাজীপুর এলাকার বাসিন্দা রেজোয়ান বলেন, পানি নামছে ধীরগতিতে। গত একমাস ধরে অনেক মানুষ এখনো পানিবন্দী। সড়ক ডুবে থাকায় চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বানিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনীসহ জেলা শহরের অলিগলির রাস্তাঘাট এমনকি অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ধীর গতিতে পানি নামার কারণে সড়কের পাশাপাশি রাস্তাঘাট ও কিছু বাসা বাড়ি, শহরের সরকারি, বেসরকারি অফিসসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় পানি উঠে গেছে। এতে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জলাবদ্ধতায় জেলার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। স্থানীয়রা জানায়, গত একমাস ধরে জেলার জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার অধিকাংশ সড়কসহ বাড়ির আঙিনায় পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের ছোট বড় সরকারি খাল, নালা ও জলাশয়গুলো ধাপে ধাপে ভরাট হয়ে যাওয়ায় জেলাবাসীর এ দুর্ভোগ। রাজনৈতিক প্রভাব এবং জনসচেতনতার অভাবে স্থানীয় ভাবে সকল দলের একশ্রেনির ভুমিদস্যুরা মিলে মিশে জেলার অধিকাংশ সরকারি খাল, নালা-নর্দমা বিভিন্ন ভাবে তাদের অবৈধ দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও গ্রামিন এলাকায় ছোট-ছোট কালভার্ডগুলোর মুখ বন্ধ ও ভরাট করে এবং মৎস প্রজেক্টের নামে জাল ও বেড়া দিয়ে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করায় একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি উঠে যায়। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। চলমান খাল পরিস্কার ও খাল পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখতে এলাকাবাসী বর্তমান সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধত্বন কর্তপক্ষের আরো জোর হস্তক্ষেপ কামনা করছে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা নানামুখী প্রদক্ষেপ গ্রহন করেছি। খালগুলো পরিস্কার, দখলমুক্ত করার কাজ চলছে। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
