ePaper

সরাইলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান নিয়ে অভিভাবকদের অভিযোগ

মো.তাসলিম উদ্দিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সরাইল

২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে উপজেলায় শিক্ষার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। শিক্ষাই আধুনিক যুগে প্রধানতম লক্ষ্য। শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ গ্রহণ করেছে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ইত্যাদির মাধ্যমে। এসব প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি শিক্ষকরা তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং মহৎ শিক্ষাদান কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকেন তারাই সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি বা শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা ও এগুলোর পরিচালনা থেকে শুরু করে সিলেবাস-কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমই নির্ভর করছে শিক্ষকদের ওপর। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন এবং কল্যাণ সাধনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য জাতির ভবিষ্যৎ রচনায় তারাই প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিষ্ঠানের সফলতা, ব্যর্থতা, সুনাম-দুর্নাম এ সবই নির্ভর করছে শিক্ষকদের যথাযথ তৎপরতা ও কার্যক্রমের ওপর। এমতাবস্থায় নিঃসন্দেহে বলা চলে, শিক্ষার মৌলিক দর্শনের আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনায় শিক্ষকদের ভূমিকা মুখ্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভুমিকা পাঠদান নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে এস এস সি ২০২৫ এর ফলাফল নিয়ে। সরাইল উপজেলা বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীও অভিভাবকরা খোদ শিক্ষকদের দায়ী করেনাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি নিয়ত তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। আছে অভিযোগ অনেকেই পাঠদানের কৌশল না জেনে, আবার যারা একটু ভালো শিক্ষক তারা দিচ্ছে’ক্লাশ ফাঁকি, বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না আসা, নিজের প্রতিষ্ঠানে বা বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানো। পাঠদান বাধ দিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের নামে ম্যাটিন করা, স্কুল চলাকালীন সময় উপজেলা চত্বরে ঘুরাঘুরি করা। শিক্ষক হওয়ার পর একাধিক পেশায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে। শিক্ষকরা তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সঠিক পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে’বলে শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকদের অভিযোগ উঠেছে। আর এর জন্য তারা এস এস সি ফলাফলের খারাপের কারন হিসাবে দেখছে শিক্ষকদের দায়িত্ব অবহেলা ও অধাসিনতাকে দায় করছে। সরাইল উপজেলা মাধ্যমিক, দাখিল মাদ্রাসা ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৫ টি ও কলেজ রয়েছে ৩ টি। একনজরে ২০২৫ সালের এস এস সি পরীক্ষার ফলাফল। পরীক্ষার্থী ১৬৫৫ সংখ্যা। পাশ করেছে ১১১৭জন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৬ জন পাশের হার(%) ৬৭.৪৯। ভোকেশনালে পরীক্ষার্থী সংখ্যা- ১০৭ পাশ করেছে- ৮২ জন, পাশের হার(%)৭৬.৬৩। দাখিল পরীক্ষার্থী সংখ্যা- ৭০ পাশ করেছে ৪৮ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন পাশের হার(%) ৬৮.৫৭। এই চিত্র শিক্ষার মান নিয়ে গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুর্বল ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না হওয়া, একাডেমিক তদারকির অভাব এবং অভিভাবকদের সচেতনতার ঘাটতিই শিক্ষার্থীদের দুর্বল ফলাফলের পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বছরের পর বছর একইভাবে খারাপ ফলাফল হলেও যথাযথ প্রশাসনিক পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এখনই শিক্ষার মানোন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে আগামী বছরগুলোতে ফলাফল আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়। এই বিষয়ে কথা হয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জীবন ভট্টাচার্য, যিনি সরাইলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন, এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি সরাইলের শিক্ষার সার্বিক চিত্র নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং অচিরেই শিক্ষার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব। শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান গুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই এখন মূল লক্ষ্য।” তিনি বলেন, স্কুলের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসমুখী করতে হবে। সকাল ছয়টা থেকে প্রাইভেট পড়া, ক্লাসে শিক্ষকের অধাসিনতা রয়েছে। সময়মতো ক্লাস না করা। শিক্ষকদের দায়িত্ব অবহেলা ও অধাসিনতা আছে। শিক্ষকের অভাব বা অবহেলা, অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে ফলাফল খারাপ হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা অচিরেই শিক্ষকদের সঙ্গে বসে একটি বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, আমরা মাত্র ফলাফল হাতে পেয়েছি এবং তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এখনই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না দেখলে ভবিষ্যতে আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা শিগগিরই শিক্ষকদের নিয়ে একটি বৈঠক করব এবং ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, তবে আপনারা দেখছেন ইতিমধ্যেই স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ শুরু হয়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *