ePaper

৪.

চরম বিপাকে ১৮ জেলায় চলাচলকারী মানুষ ও যানবাহন

মো. নাজমুল হুদা,খুলনা

খুলনা মহানগরীতে প্রবেশের তিনটি প্রধান প্রবেশপথের সড়কের বেহাল দশায় চরম দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। কেডিএ, কেসিসি ও এলজিইডি’র মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সংস্কার না হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ইজিবাইক, বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। পাশাপাশি বিকল্প সড়কগুলোতে চাপ বেড়ে পড়েছে। স্থানীয় সংগঠনগুলো আন্দোলন ও মানববন্ধন করলেও এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। নাগরিক নেতাদের অভিযোগ, একে অপরের উপর দায় চাপানোর কারণে সড়কগুলো এখন কার্যত “অভিভাবকহীন” হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বারগুলো, সূত্র মতে, খুলনায় প্রবেশের জন্য তিনটি প্রধান সড়ক রয়েছে—

১. মোস্তফার মোড় থেকে রায়েরমহল (২ কিলোমিটার, কেসিসির নিয়ন্ত্রণে)

২. খানজাহান আলী সেতু থেকে রূপসা ট্রাফিক মোড় হয়ে শিপইয়ার্ড সড়ক (৪ কিলোমিটার, কেডিএ’র নিয়ন্ত্রণে)

৩. সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক (২.১৬ কিলোমিটার, কেসিসি ও কেডিএ’র নিয়ন্ত্রণে)

এই সড়কগুলোর পাশেই রয়েছে ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২৭টির মতো চালকল, ২৪৩টির মতো কাঠগোলা ও অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে শুধু পরিবহন নয়, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনও ভোগান্তিতে পড়ছে।

দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তি,

শিপইয়ার্ড সড়ক : ২০১০ সালে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এক যুগের বেশি সময়েও শেষ হয়নি।

সোনাডাঙ্গা সংযোগ সড়ক : ২০১১ সালে নির্মাণ শুরু হলেও কয়েক বছরের মধ্যেই বড় গর্তে পরিণত হয়েছে।

রায়েরমহল-মোস্তফার মোড় সড়ক : ২০২২-২৩ অর্থবছরে নির্মাণ হলেও কাজ শেষ না হতেই নষ্ট হয়ে গেছে। বাস চালক আনোয়ার বলেন, “আমাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। দুর্ঘটনায় প্রতিদিনি মানুষ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে,আমার মনে হয় শয়তান ইবলিশ ও মানুষকে এত কষ্ট দেয় না।” এক চাতাল মালিক জানান, “অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বর্ষায় রাস্তায় পানি জমে আবারও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে পরিবহন ব্যয় বাড়ছে।” শিপইয়ার্ড মোড়ের একাধিক বাসিন্দারা বলেন, “উন্নত জীবন-যাপন করার জন্য স্ব পরিবারে বিভাগীয় শহর খুলনায় এসেছিলাম, কিন্তু এমন সড়ক কোনো প্রত্যন্ত গ্রামেও বর্তমানে নেই।”

আন্দোলন ও দাবি: ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান মুন্না বলেন, “আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কেডিএ ও স্থানীয় সরকার দপ্তরের কর্মকর্তারা শুধু দায় এড়াতে ব্যস্ত। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও নীরব চাঁদাবাজি চলছে।” তিনি আরও জানান, প্রতিবাদ স্বরূপ তারা সড়কে ধানের চারা রোপণ করেছেন এবং এক যুগেও শিপইয়ার্ড সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় কেডিএকে “লাল কার্ড” প্রদর্শন করেছেন। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক মোর্ত্তজা আল মামুন বলেন, “মাহাবুব ব্রাদার্সের সাথে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে দরপত্র আহ্বান চলছে। নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কারণে বিলম্ব হচ্ছে।” খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার বলেন, “সোনাডাঙ্গা সংযোগ সড়কের অর্ধেক কেসিসির আওতায়, বাকিটা এলজিইডির। এলজিইডি এখনও আমাদের সড়ক বুঝিয়ে দেয়নি, তাই টেন্ডারসহ অন্যান্য কাজ করা সম্ভব হয়নি।”

সর্বোপরি দেখা যায় যে, খুলনায় প্রবেশকারী ১৮ জেলার যাত্রী এবং অসুস্থ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও বিভিন্ন ধরনের পরিবহন প্রতিদিনই এই তিন সড়কের দুরবস্থার কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। স্থানীয়রা দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *