ফয়সাল আলম সাগর, কক্সবাজার
কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম যোগদানের চার মাসে অপরাধ দমনের মাধ্যমে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তায় পরিণত হয়েছেন। তিনি যোগদানের পর থেকে অনেকটা কমে গেছে মাদকের ভয়বহতা, খুন-খারাপি, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ চাঁদাবাজির মত ঘটনা। সততা, আন্তরিকতার ছোঁয়ায় ও সাহসিকতায় তিনি ক্রমশ হয়ে উঠেছেন উপজেলাবাসীর জনবান্ধব ওসি হিসেবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বস্তিবোধ করছেন সকল শ্রেনী পেশার মানুষ। ?চলতি সনের ১১ মার্চ চকরিয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম যোগদান করেন। তিনি এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১নং ওয়ার্ড পুলিশ ফাঁড়িতে ইমিগ্রেশন ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং সর্বশেষ গেল বছরের নভেম্বরে পদায়ন হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানায় ওসি হিসেবে নিযুক্ত হন। ?জানা যায়, চকরিয়া থানার ওসি হিসেবে মো. শফিকুল ইসলাম ১১ মার্চ যোগদানের পরপরই তার কিছু ব্যতিক্রম উদ্যোগে পাল্টে যায় চকরিয়ায় দৃশ্যপট। তিনি যোগদান করেই থানাকে ঘুষ ও দালালমুক্ত ঘোষণা করে সাধারণ মানুষের জন্য পুলিশি সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ শুরু করেন। তার চার মাসের চেষ্টায় ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এ অঞ্চলে সন্ত্রাস ও সামাজিক অপরাধ কমে এসেছে। ?চলতি বছরের ১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন মামলার মোট ১২৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে চিহ্নিত ডাকাত, চোর, মাদক কারবারি ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিও রয়েছে। ?গত ৪ জুন উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের ছনম্যারঘোনা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে দেশীয় একটি বন্দুক, তাজা কার্তুজ এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। মাসব্যাপী অভিযান চালিয়ে চোলাই মদ, গাঁজা ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। ?এ ছাড়া ওসি মো. শফিকুল ইসলাম থানার দায়িত্ব নিয়েই সন্ত্রাস ও নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে অভিযান শুরু করেন। ?থানায় যোগদানের পরে সাংবাদিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংগঠন, ছাত্রপ্রতিনিধির সঙ্গে বসে তিনি বিভিন্ন এলাকার সামাজিক নেতৃত্বের তালিকা করেন। এরপর থেকে তিনি ওই সব সামাজিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। সামাজিক কোন্দল ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেন তিনি। গত ০৫ আগস্টের পরবর্তী সময় জনগণ পুলিশের মধ্যে একটি দুরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল, বর্তমানে তা নেই। এখন কোন অভিযোগ বা আইনি সেবা নিতে গেলে হয়রানি হতে হয় না সাধারণ মানুষকে। ?এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ওসি শফিকুল ইসলাম কখনোই মিথ্যা মামলা বা অনৈতিক উপায়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তার পুলিশিং নীতি হচ্ছে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর, কিন্তু ন্যায্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তার এই পদ্ধতি সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত নয়, বরং পুলিশের প্রতি আস্থাশীল করেছেন। সেই সঙ্গে, তিনি সবসময় মানুষের নিরাপত্তার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন এবং নিশ্চিত করছেন যে, কোনো অপরাধী আইনের বাইরে নয়। আজকের এই লেখাটি, মূলত ওসি শফিকুল ইসলামের ক্রমবর্ধমান সফলতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, যা প্রতিদিনই সংবাদ শিরোনামে আসছে। তার অপরাধ নিধনে অসামান্য কার্যক্রম ও জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতার কারণে চকরিয়া থানা বর্তমানে একটি সফল পুলিশিংয়ের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ?চকরিয়া থানায় সেবা নিতে আসা আব্দুল হাকিম বলেন, ওসি শফিকুল ইসলাম নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ। তিনি সকলের সাথে সর্বদা হাঁসি মুখে কথা বলেন। তিনি থানার সকল কর্মকর্তাদের সাফ জানিয়ে দেন যে আমার থানায় যেসকল অভিযোগ আসবে সেগুলো ফেলে না রেখে দ্রুত তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মানুষ থানায় পুতুল খেলতে আসেনা, এখানে বিপদে পড়েই আসে সে বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে সকলকে দেখতে হবে। বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি মোবারক হোসেন জিহান বলেন, মানুষ বিপদে পড়ে থানার ওসির কাছে গেলে তিনি মনোযোগ সহকারে তাদের কথা শুনেন এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর ভেঙ্গে পড়া আইনশৃঙ্খলা পুণঃরুদ্ধার ছিলো কঠিন একটা কাজ। তিনি তার মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা সহ সার্বিক বিষয়ে দক্ষতার সাথে মোকাবিলা করে আইনশৃঙ্খলা স্বাবাভিক পর্যায়ে নিয়ে আসায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসছে। ?চকরিয়া থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পারভেজ মাহমুদ বলেন, চলতি মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযানে ২৪ জন চিহ্নিত ডাকাত, ৪ জন মাদক কারবারি, ২৮ জন নিয়মিত মামলার আসামি, ১২ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং ৫৯ জন ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ?চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। অপরাধীরা যতই শক্তিশালী হোক তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কোন পেশিশক্তিকে ভয় পাই না। আগামী দিনে আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য সততা ও নিষ্টার সাথে পালন করে যেন জনগনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি সে চেষ্টায় করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও পুলিশকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আশা করি এলাকায় সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ আগের চেয়ে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করবে।