রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন চরে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে দেড় শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি, আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে আরো দুই শতাধিক একর ফসলি জমি। ভাঙন হুমকির মুখে রয়েছে হাজারো পরিবার, শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও হাজারো একর ফসলি জমি। জিওব্যাগ ফেলেও নদী ভাঙন বন্ধ হচ্ছে না। অব্যাহত ভাঙনে কৃষকের বাঁচার সম্বল ফসলসহ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসতবাড়ি ও আবাদি জমি ভাঙনের ফলে অসংখ্য মানুষ চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী, খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, মনসুর নগর ও চরগিরিশ ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে নদীভাঙনে বাড়িঘরসহ আবাদি জমি যমুনারগভে বিলীন হচ্ছে। বিশেষ করে খাস রাজবাড়ী, মাইজবাড়ী নিশ্চিন্তপুর ও চরগিরিশ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোথাও ভাঙন তীব্র, কোথাও ধীরগতি। ভাঙন হুমকির মুখে পরিবারগুলো তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের যোগাযোগে বিড়ম্বনা বেড়েছে। এ উপজেলার মাইজবাড়ী, কাজিপুর, গান্ধাইল, শুভগাছা, খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর মনসুর নগর ও চরগিরিশ ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী। প্রতি বছর যমুনার পানিবৃদ্ধি ও মুষলধারে বৃষ্টি হলেই শুরু হয় নদী ভাঙন। বর্ষাকালব্যাপী চলতে থাকে ভাঙন। নদী পাড়ের মানুষের দাবি, স্বাধীনতার পরে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি সরকার। যদিও মাঝে মাঝে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, তেমন কাজ হয়নি। যার কারণে প্রতি বছর বসতবাড়ি, ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। চরাঞ্চলের শ্রীপুর ও ফুলজোড় গ্রামের আব্দুল মজিদ, শফিকুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে যমুনার পানি সামান্য বৃদ্ধিতে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তার এলাকার বসতবাড়ি ও তোষাপাটসহ জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। শ্রীপুর ও ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ভাঙনের মুখে শতাধিক বিঘা ফসলি জমি। তাঁরা আরও বলেন নদীতে পানি বেড়ে বন্যা আসলে যমুনার চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। অথচ দেখার কেউ নাই। খাসরাজবাড়ী ইউনিয়নের রাজবাড়ী গ্রামের নদী ভাঙনের শিকার আমজাদ হোসেন বলেন, এ বছরসহ আমার বয়সে ১২বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। নদী ভাঙনের কষ্ট আর সইতে পারছি না। ইউপি সদস্য বাবলু মিয়া বলেন, তার ওয়ার্ডে ৬০/৭০ টি পরিবারের বসতবাড়ি দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়েছে। সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা দেয়া হয়নি। কাজিপুর উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ও শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম মুন্টু বলেন, ভাঙন কবলিত পরিবারের খবর কেউ নিচ্ছেন না। ওই এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার জুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে গোটা এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলতে হবে। সাত নম্বর খাসরাজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নের রাজবাড়ী ও খাসরাজবাড়ী গ্রামে যমুনার তীব্র ভাঙনে শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হাইস্কুল, মসজিদসহ ভাঙনের মুখে শতাধিক পরিবার তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। সরকারি ভাবে তেমন সারা পাওয়া যাচ্ছ না। পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ্এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ সরকারের উপর মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
