ePaper

সেলফ সেন্সরশিপ: গণমাধ্যমের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ ভাবনা

সেলফ সেন্সরশিপ নিয়ে সিজিএস আয়োজিত আলোচনায় বক্তারা গণমাধ্যম সংস্কার ও সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করছেন।
সেলফ সেন্সরশিপ: সিজিএসের আয়োজনে গণমাধ্যম সংস্কার ও স্বাধীনতা নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহণ।

সেলফ সেন্সরশিপ এখনো বাংলাদেশের গণমাধ্যমে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে পড়ার ফলে এই সেলফ সেন্সরশিপ গভীর শেকড় গাড়তে সক্ষম হয়েছে। রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: গণমাধ্যম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তারা সেলফ সেন্সরশিপ এবং গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তরুণ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারাও অংশ নেন। বক্তারা জানান, গণমাধ্যমশিল্পকে ঢেলে সাজানোর একটি বিরল সুযোগ এসেছে, যা সাংবাদিকতার গুণগত মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সেলফ সেন্সরশিপ: মূল কারণ ও প্রভাব

আলোচনায় অংশ নিয়ে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা না থাকায় সেলফ সেন্সরশিপ এখনো বিদ্যমান। আর্থিক নিরাপত্তার অভাব এবং বিভিন্ন সংস্থার হস্তক্ষেপের কারণে সাংবাদিকরা অনেক সময় মুক্ত চিন্তা প্রকাশে ব্যর্থ হন। তিনি জানান, সাংবাদিকদের জন্য একটি ন্যূনতম বেতন কাঠামো তৈরি করা জরুরি।

মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, “সেলফ সেন্সরশিপ এখনো গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত। এটি সাংবাদিকদের নির্ভয়ে কাজ করার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকতা বিফল হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সরকারের তাঁবেদারি করা হয়েছে।

গণমাধ্যম সংস্কার: কীভাবে এগোবে বাংলাদেশ

গণমাধ্যম সংস্কার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বক্তারা বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পাশাপাশি এর সীমা নির্ধারণ করাও জরুরি। তিনি প্রস্তাব করেন, “গণমাধ্যমে একক মালিকানার পরিবর্তে শেয়ারভিত্তিক মালিকানা ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক শামীম রেজা বলেন, “দেশীয় গণমাধ্যম খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আরও খোলামেলা আলোচনা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করা সম্ভব।”

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা

কামাল আহমেদ জানান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জবাবদিহি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলকে কার্যকর করা এবং গণমাধ্যমের মালিকানা ও অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জিল্লুর রহমান বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে গণমাধ্যমকে পাপেট মিডিয়ায় পরিণত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় গণমাধ্যম সংস্কারের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে।”

উপসংহার

সেলফ সেন্সরশিপ দূর করতে সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি গণমাধ্যম শিল্পের টেকসই উন্নয়ন এবং জনস্বার্থ রক্ষায় সাংবাদিকতা আরও জবাবদিহিমূলক ও নির্ভীক হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট পয়েন্ট

  • সাংবাদিকদের জন্য ন্যূনতম বেতন কাঠামোর প্রস্তাব।
  • গণমাধ্যম মালিকানার স্বচ্ছতা এবং বিদেশি বিনিয়োগ।
  • সেলফ সেন্সরশিপ কমাতে আর্থিক ও আইনি নিরাপত্তা।
  • গণমাধ্যমের জন্য কার্যকর রেগুলেশন এবং প্রেস কাউন্সিলের পুনর্গঠন।

এই আলোচনা সভা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, সেলফ সেন্সরশিপ মুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে কেবল নীতি প্রণয়ন নয়, এর সঠিক বাস্তবায়নও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়তে

Share Now

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *