সেমিকন্ডাক্টর খাতের বিকাশে বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
বুধবার বিডার প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত “সেমিকন্ডাক্টর: বাংলাদেশে অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র” শীর্ষক এক আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সেমিকন্ডাক্টর খাতের টাস্কফোর্স
সভায় জানানো হয়, সেমিকন্ডাক্টর খাতের টাস্কফোর্সে উদ্যোক্তা, গবেষক, প্রবাসী বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই টাস্কফোর্স চিপ ডিজাইন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এবং সংযোজন কার্যক্রমের উন্নয়নে কাজ করবে।
প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, “সেমিকন্ডাক্টর খাতের উন্নয়নে বাধাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধান প্রস্তাব করবে টাস্কফোর্স। পাশাপাশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিডাকে এক দরজায় সেবা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করবে।”
সেমিকন্ডাক্টর খাতের বর্তমান অবস্থা
বিডার তথ্যমতে, বাংলাদেশ বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টর খাত থেকে বছরে প্রায় ৬০ লাখ ডলার আয় করছে। বর্তমানে মূলত আইসির নকশা তৈরির কাজেই দেশের দক্ষতা সীমাবদ্ধ। তবে এই খাতে প্যাকেজিং, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এবং সংযোজন কার্যক্রমের সম্প্রসারণের বিশাল সুযোগ রয়েছে।
গ্রিন কোয়েস্টের প্রতিষ্ঠাতা মাশুক রহমান সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “সঠিক নীতি প্রণয়ন, জনসচেতনতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেমিকন্ডাক্টর খাতকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।”
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকা
সিলিকন ভ্যালির সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি আলকাসেমির প্রতিষ্ঠাতা মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাক্রম উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে। প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে এই খাতের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।”
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০৩০ সালের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর খাত থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআইএ)। এই লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে ১০টির বেশি দেশি প্রতিষ্ঠান চিপ ডিজাইন থেকে শুরু করে প্যাকেজিং কার্যক্রমে কাজ করছে।
সেমিকন্ডাক্টর খাতের বিকাশের সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। এ খাতের সঠিক নীতি, উন্নত শিক্ষাক্রম, এবং কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
বিডা এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন ভিত্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মন্তব্য বা তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
Share Now