সুবিধা পেলে কৃষিতে নতুন সম্ভবনা হতে পারে তিল এক ফসলি জমিতে আমন ও সরিষা পর তিল চাষ করায় খুশি হাটহাজারীর কৃষকরা

সুমন দাশ গুপ্ত পল্লব (চট্টগ্রাম) হাটহাজারী

ভোজ্যতেল হিসেবে চাহিদা বাড়ার কারণে দিন দিন তিল চাষে আগ্রহ বেড়েছে চট্টগ্রামে হাটহাজারীতে কৃষকদের মাঝে। সরিষার মতোই অল্প শ্রম, কম খরচ ও অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা তিল চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়াও সব ধরণের মাটিতে তিল উৎপাদিত হয়। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার প্রভাবে হারিয়ে যাওয়া তেলবীজ ফসল তিল আবারও ফিরে আসছে মাঠে। জমির জৈব উর্বরতা ফিরিয়ে আনা ও কম খরচে লাভজনক ফসলের আশায় কৃষকেরা ঝুঁকছেন তিল চাষে। এই বছর উপজেলা ১১হেক্টর জমিতে তিল চাষ করা হয়। এর মধ্য উপজেলা উদালিয়া এলাকায় সারে তিন হেক্টর, ধলই ৩ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। এছাড়া কয়কটি ইউনিয়নে ১হেক্টর করে এবং কয়েকটি এলাকাশ অল্প পরিসরে কৃষকরা তিল চাষ করেছে। উপজেলার ধলই ইউনিয়নে কয়েকটি স্থানে ঘুরে দেখা যায়, আমন আবাদের পর ক্ষেত যখন খালি থাকে, তাই জমি অনবাদি না রেখে কৃষি অধিদপ্তরে পরামর্শে সরিষার পর পতিত জমিতে তিলে চাষ করেছে।

জানা যায়, প্রতি হেক্টর জমিতে দেড়টন তিল পাওয়া যায়। সেচ, সার এবং নিড়ানী প্রয়োজন হয় না। ফলন পাওয়া যায় ৩ মাসের মধ্যেই। ১ হেক্টর জমিতে তিল চাষ করে খরচ হয় ৪৫-৫০ হাজার টাকা। খরচ বাদে আয় হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। তিল চাষে সার ও কীটনাশক লাগে না বললেই চলে। গরু-ছাগল তিলগাছ খায় না বলে রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোনো খরচ নেই। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সূত্রে জানায়, উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এরং বাজারে ভালো দামে বিক্রি হওয়ায় তিল চাষে কৃষকেদের আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়া ভোজ্য তেল হিসেবেও তিল তেলের চাহিদা বেড়েছে। এ বছর উপজেলায় প্রায় ১১ হেক্টর জমিতে তিল চাষ করা হয়েছে। চলিত মৌসুমে বীজ সহায়তা হিসেবে কৃষকের মাঝে তিলের বীজ প্রদান করা হয়। তিলের ব্যবহার এবং তিল থেকে উৎপাদিত তেল বেশ স্বাস্থ্যসম্মত। এ বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনা সুবিধা পেলে এ উপজেলার কৃষিতে নতুন সম্ভবনা হতে পারে তিল। উপজেলার ধলই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড এলাকার চাষী মো:আলমগীর বলেন, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে তিনি এই বছর প্রথম তিলের আবাদ করছেন। প্রথমবার তিনি ১হেক্টর জমিতে তিল চাষ করেন। তাকে দেখে অনেকে ছোট পরিসরে তিল চাষ করছেন। তিল চাষে রাসায়নিক সার ও জমি নিড়ানির দরকার হয় না। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো:সাইফুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে তিল চাষের জন্য উপযোগী সময় মার্চ মাসে। খরচ কম, পরিচর্যার ঝামেলা কম এবং বাজারে তিলের চাহিদা ভালো থাকায় আমরা কৃষকদের তিল চাষে উৎসাহ দিচ্ছি।”তিল গাছের পাতা মাটিতে মিশে জমির উর্বরতা বাড়ায়। এতে পরবর্তী আমন মৌসুমে কম সার ব্যবহার করেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো: আল মামুন সিকদার বলেন, আমান চাষের পর সেচের অভাবে জমি খালি ফেলে রাখে কৃষকরা। আমনের পর দুই বার সেচ দিলে বারি সরিষার ফলন করা যায়। এরপরে তিল বপন করতে পারেন। তার ধারবাহিকতায় উপজেলায় কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে ডিসেম্বরে বারি সরিষা চাষের পর মার্চের শেষে কৃষকরা তিল চাষ করেন। এই বছর সরিষার পর তিল বাম্পার ফলন হয়েছে। এক ফসলী জমিকে তিনফসলী রুপান্তর করায় খুশি কৃষকরা। তিলের তেল স্বাস্থ্য সম্মত। এটিতে ওমেগা ত্রি ও ওমেগা ফ্যাটি সিক্স রয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *