ePaper

সিলেটে স্বস্তির বাজারে সুলভ মূল্যে ডিম-দুধ-গোশত বিক্রি যেন সরকারি বোনাস

আগের যে কোনো রমজানের চেয়ে এবার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছে সিলেটের মানুষ। মাছ বা মাংসের হাটে যেমন অতিরিক্ত দামের চাপ নেই তেমনি চাপ নেই সদাইপাতি কিংবা সবজিতে। এতসব স্বস্তির মাঝে নগরবাসীর জন্য যেন ‘বোনাস’ হিসেবে যোগ হয়েছে সরকারি উদ্যোগে সুলভ মূল্যে ডিম, দুধ, ব্রয়লার এবং গরুর গোশত বিক্রি।নগরীতে ১০ দিনব্যাপী এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কর্মসূচির অধীনে ডিম প্রতি পিস ৯ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, দুধ (পাস্তুরিত) প্রতি লিটার ৮০ টাকা এবং  গরুর গোশত প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।গতকাল সোমবার নগরীর টিলাগড়ে এই কর্মসূচির আওতায় ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে সুলভমূল্যের পণ্য বিক্রি হয়। যেখানে ছিল ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত টিলাগড় পয়েন্টে এইসব পণ্য বিক্রি করা হয়।

নাগরিকরা বলছেন, বিগত সময়ে রমজান এলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতো একদল অসাধু চক্র। এবার সরকারি উদ্যোগ ও তদারকির কারণে দাম স্থিতিশীল থাকায় অনেকটা স্বস্তিতে কেটেছে গুরুত্বপূর্ণ এই মাস।বাজারে পণ্যের দামে নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে মাংস-ডিম-দুধ কিনতে হচ্ছে— এ কারণ জানতে চাইলে পণ্য কিনতে আসা নগরের লামাপাড়ার স্কুলশিক্ষক কামরুল হাসান জানান, বাজারে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম। তবু সরকারি ভ্রাম্যমাণ ভ্যান থেকে মাংস-ডিম-দুধ কিনে যা বাঁচবে তা হবে বোনাস।নগরের টিলাগড় ভাটাটিকর এলাকার নূর-ই-উমামা (৩৫) প্রায় আধাঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ৬ কেজি গরুর গোশত, ৫ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার, ৫ হালি ডিম ও তিন লিটার দুধ কিনেছেন। তিনি জানাচ্ছিলেন, একটু কষ্ট হলেও দাঁড়িয়ে বাজার কেনায় তার বেঁচে গেছে ১ হাজার ৩৭০ টাকা। উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে তিনি আরও দুই কেজি গরুর গোশত অথবা অন্য কিছু কিনতে পারবেন।

কীভাবে এত টাকা উদ্বৃত্ত হলো তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় বাজারে এখন গরুর গোশত কেজি প্রতি ৭৭০ টাকা। সুলভ মূল্যের ভ্যান থেকে কিনে চার কেজিতে তার বেচে গেছে ৭২০ টাকা। ড্রেসড ব্রয়লার বাজারে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, এখানেও তার বেঁচে গেছে ৫ শ’ টাকা। এছাড়া দুধ লিটার প্রতি ৩০ টাকা এবং ডিম হালিপ্রতি ১০ টাকা বেঁচে গেছে।

এই কর্মসূচি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা বিশ্বনাথ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস শহীদ হোসেন জানান, টিলাগড়ে প্রায় পাঁচশ ক্রেতার দীর্ঘ সারি ছিল। পুলিশের সহযোগিতায় শৃঙ্খলা তৈরি করে সোমবার পণ্য বিক্রি করতে হয়েছে। অবশ্য, টিলাগড়ে পণ্য বিক্রির পর বিকেলে নগরের শিবগঞ্জ ও উপশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানটি নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ দুটি গাড়িতে নগরে সুলভমূল্যের ডিম, দুধ, ব্রয়লার ও গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিনশ কেজি গরুর গোশত, সাড়ে চারশ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার, ৯ শ’ লিটার দুধ, ৭ হাজার পিস ডিম বিক্রি করা হচ্ছে।

গত শনিবার (২২ মার্চ) থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। একেক দিন একেক পয়েন্টে বিক্রির চেষ্টা করছেন তারা। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত দশদিনের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

আজ মঙ্গলবার একই সময়ে সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে সুলভ মূল্যের এই পণ্য বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনার কথা রয়েছে।

কার্যক্রম মনিটরিংয়ে দায়িত্বে থাকা সদস্য ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ জুনায়েদ জানান, রমজান মাসে বাজারে এইসব পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে সুলভমূল্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

এদিকে, গত শনি ও রোববার দুদিনে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে সিলেট নগরে ৭১১ কেজি গরুর মাংস, ৮৮৫ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার মাংস, ১৭০৩ লিডার দুধ ও ১৪ হাজার ৮শত ৮০ টি দুধ কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন স্টক থাকা সাপেক্ষে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *