ePaper

সিরাজগঞ্জ শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আধুনিক সরঞ্জাম থাকেলেও নেই জনবল

রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি আধুনিক যন্ত্রপাতি আর প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আনা হয়েছে ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বেড, সিআরএম যন্ত্র, ল্যাসিকস মেশিন, ক্যাথল্যাব, হার্ট-লাং মেশিনসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। কিন্তু দক্ষ জনবল না থাকায় এসব সরঞ্জাম বছরের পর বছর অকেজো হয়ে আছে। পাঁচ বছর ধরে চালু হয়নি আইসিইউ ইউনিট। সরেজমিনে জানা যায়, হাসপাতালের চিত্র বহির্বিভাগের সামনে রোগীর দীর্ঘ সারি। কমপক্ষে দুই হাজার লোকের সমাগম। এগিয়ে যেতেই অন্তঃবিভাগ। বারান্দা ধরে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে একটি কক্ষে অত্যাধুনিক আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটর। প্রায় চার কোটি টাকায় কেনা বেডগুলোতে ধুলা জমেছে। ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের মেমোগ্রাফি যন্ত্র এখনও বন্ধ রয়েছে। চক্ষু বিভাগে অত্যাধুনিক ল্যাসিকস যন্ত্রসহ বেশ কিছু উন্নতমানের আধুনিক যন্ত্র। কিন্তু চিকিৎসক ও দক্ষ জনবলের অভাবে সেগুলো সচল করা যাচ্ছে না। অথচ প্রতিদিন শ্বাসকষ্ট বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ছুটে আসছেন। তাদের স্থানান্তর করা হচ্ছে রাজশাহী, বগুড়া বা এনায়েতপুরের হাসপাতালে। জনবল সংকট চরমে ২০১৪ সালে শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের আগস্টে সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ২০টি বিভাগ চালু আছে। ওয়ার্ড রয়েছে ১৫টি। অস্ত্রোপচার কক্ষ আছে ১৫টি। ৩৮ শয্যার সিসিইউ সচল আছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ২ হাজার ৫০০ জন ও অন্তঃবিভাগে ৪০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য প্রণীত জনবল কাঠামো এখনও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়নি। প্রাথমিকভাবে ৭৫ জন সহকারী রেজিস্ট্রারের পদ রাখা হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ৫৯ জন কর্মরত। ১৭৩টি নার্সের পদের মধ্যে ১৬৫টি পূরণ হয়েছে। ১৭ জন মেডিকেল টেকনিশিয়ান আছেন। তবে আরও ১০ জন প্রয়োজন। শুরু থেকেই আউটডোরে কোনো ডাক্তার বা সহকারী রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর ৫৯টি পদের মধ্যে ৪৫টি শূন্য। ১৭২ জন আউটসোর্স কর্মী থাকলেও ১২৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঘাটতি রয়েছে। ইনডোর-আউটডোর সেবার জন্য আরও ৭৩ জন ডাক্তার নিয়োগের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনও অনুমোদিত হয়নি বলে পরিচালক অধ্যাপক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান জানান। চিকিৎসক-নার্সদের আক্ষেপ আইসিইউর সিনিয়র স্টাফ নার্স মীম খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, গত পাঁচ বছরেও ইউনিট চালু হয়নি। সার্জারি ওয়ার্ডে কাজ করছি। সাংবাদিকরা আসে, ছবি তোলে, কিন্তু ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেই। অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জুলফিকার হোসেন বলেন, সিআরএম যন্ত্র আছে, কিন্তু ফ্যাকচার টেবিলসহ অন্য সরঞ্জাম না থাকায় ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। পরে নিজ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্র কিনে অপারেশন চালু করেছি। চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ল্যাসিকসসহ অনেক দামি মেশিন আছে, কিন্তু জনবল নেই। বিদ্যুৎ গেলে বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। রোগীদের দীর্ঘশ্বাস জেলা শহরের গোশালা হাজিব্যারক মহল্লার বাসিন্দা হেলালুজ্জামান বলেন, মায়ের দুবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ভেন্টিলেটর না থাকায় তাঁকে এনায়েতপুরের বেসরকারি হাসপাতালে নিতে হয়েছে। এতে অর্থ-সময় দু্টােই নষ্ট হয়। ধানবান্ধির নাহিদ ইসলাম বলেন, আমার মায়ের কিডনিতে সমস্যা। ডায়ালিসিস করতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। জনবল সংকটের কারণে মেশিন থাকলেও সিরিয়াল পাইনি। বাধ্য হয়ে বাইরে যেতে হয়েছে। পরিচালক ডা. এ.টি.এম. নুরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও দক্ষ জনবল নেই। পড়ে থাকতে থাকতে হার্ট-লাং মেশিন, ক্যাথল্যাব, ভেন্টিলেটর; সব অচল। জটিল রোগী এলে অন্যত্র স্থানান্তর করা ছাড়া উপায় থাকে না। উপপরিচালক ডাক্তার ওয়াদুত বলেন, স্বল্প জনবল দিয়েই আমরা যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু সংকট এতটাই প্রবল, পেরে ওঠা যায় না। আরও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ না দিলেই নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *