ePaper

সিরাজগঞ্জে হিজড়া মালেকা ছাগল পালনে স্বাবলম্বী

রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

বায়ান্ন বছর বয়সী হিজড়া মালেকা বানু স্বাবলম্বী হওয়ার পথে এগিয়ে গেছেন। নিজ বাড়িতে পাঠা ছাগলের খামার গড়েছেন। তার খামারের আয়ের টাকায় সংসার চলছে। তার খামারটি উন্নত ছাগল প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের খাদুলী গ্রামের জলিল সরদারের চার সন্তানের একজন হলেন মালেকা বানু। তার দুই ভাই আর দুই বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। বাল্যকালে তার বাবা মারা গেছে। প্রায় ত্রিশ বছর হলো মালেকা উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর রেলস্টেশনের পাশে ঘরদরজা তুলে মা ভাইদের সাথে বসবাস করছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে টিনের ছাউনির একটি ঘরে ছোট বড় সাইজের দশটি ছাগল পালন করছেন মালেকা। যার মধ্যে সাতটি উন্নত জাতের পাঠা ছাগল রয়েছে। মালেকা আত্নীয়-স্বজনদের কাছে থেকে টাকা ধার করে হরিয়ানা, তোতাপুরি, নেপালীসহ হাইবিট জাতের পাঠা ছাগল কিনে ছোট আকারের একটি খামার গড়ে তুলেছেন। এখানে পালন করা পাঠাগুলো প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রজনন করানোর ক্ষেত্রে তিনি বাণিজ্যিকভাবে পাঠা ছাগলের প্রজনন ফি গ্রহণ করেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে তার ছাগল প্রজনন বাণিজ্য। এক্ষেত্রে প্রজনন ফি হিসেবে দুইশ’ টাকা ফি গ্রহণ করেন। যা দিয়ে ছাগলদের খাবার ক্রয় ও সংসার খরচ চালান তিনি। পাশাপাশি কিছু টাকা সঞ্চয়ও করেন। মা সায়রা খাতুন জানান, ছোটবেলা থেকেই সংসারে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে আসছেন মালেকা। অন্য ভাইবোনেরা তাকে অনেক সম্মান করে এবং ভালবাসে। সবাই তাকে মালেকা বুবু বলে ডাকে। মালেকা বানু বলেন, আমি একজন হিজড়া। আমারও এই সমাজে সম্মানের সাথে চলার ও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। অন্য হিজড়াদের মতো ভিক্ষা করে টাকা আয় করা কিংবা মানুষের কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়া ছোট বেলা থেকে ঘৃণা করে থাকি। নিজে কাজ করে টাকা আয় করা আর সেই টাকায় সংসার চালানোর আলাদা মজা আছে। তিনি আরো বলেন, আমি মা ভাইদের সাথে একই সংসারে মিলে মিশে থাকি। এটা আমার গর্ব আমার অহংকার। তার ইচ্ছে আছে আরো বেশি ছাগল ও গরু লালন পালন করা। তার জন্য টাকা দরকার। তার কাছে টাকা নেই। অন্য হিজড়ারা তাকে পরিশ্রমের এ কাজ বাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে তাদের সাথে থাকার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছে কিন্তু তিনি তাতে সাড়া দেন না। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকতা ডা. শেখ এম.এ মতিন বলেন, জীবন জীবিকায় হিজড়ারা দলবেধে হাট বাজারে গিয়ে দোকান থেকে টাকা চেয়ে নেয়। এরা মাঝে মধ্যে টাকার জন্য জোর জুলুম করে থাকে। সমাজের স্বাভাবিক মানুষগুলো তাদের অন্য চোখে দেখে। তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করে। অথচ হিজড়ারা আমাদেরই কারো না কারো সন্তান ও ভাইবোন। মালেকা বানু নিজ আগ্রহে ছাগল লালন পালন করে টাকা আয় করছেন জানতে পেরেছি। তিনি মালেকার খামারটির খোজ খবর নেবেন। তার বিভাগ থেকে সহযোগিতা করবেন বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *