রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জঃ
আর কয়দিন পরেই কোরবানির ঈদ। এবারের ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হাট প্রাঙ্গণ। এবছরও কোরবানির পশুর দাম বেশি বলে জানান ক্রেতারা অপরদিকে গো-খাদ্যের যে দাম তাতে খামারিরা লোকসানের মুখে পরবে। জেলায় এবার কালিয়া কান্দাপাড়া, কাটাওয়াবদা, তালগাছি, এনায়েতপুর, সমেশপুর, চান্দাইকোনা, বাগবাটি, রতনকান্দি, বহুলি, উল্লাপাড়া গ্যাস হাটসহ প্রায় অর্ধশত স্থায়ী হাটের পাশাপাশি বসবে অনেক অস্থায়ী পশুর হাটও। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছরেই এ জেলায় মোটাতাজা করা কোরবানির পশু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করা হয়। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছরে গো-খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে অনেকটাই। এর উপর যদি ভারত থেকে আসা গরু কোরবানির হাট-বাজারে অবাধে বিক্রি হয় তবে লোকসানের আশঙ্কা করছেন গো-খামারিরা।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একে এম আনোয়ারুল হক সবুজ জানান, জেলার ৯টি উপজেলায় প্রস্তুত ষাঁড়, বলদ ও গাভী, ছাগল, মহিষ, ভেড়াসহ মোট সাড়ে ৬ লাখের মতো। আর জেলায় চাহিদা রয়েছে প্রায় আড়াই লাখের মতো। চাহিদার অতিরিক্ত গবাদি পশু বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন। চরাঞ্চলে ঘাসের প্রাচুর্যের কারণে সেখানে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু-ছাগল পালন করায় এই এলাকার পশুর চাহিদা অন্যান্য অঞ্চলে বেশি-বলেছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। জেলার চাহিদা পূরণের পর বাকি পশু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। তালগাছি হাটে গরু কিনতে আসা আবুল হোসেন জানান, বড় গরুর চেয়ে মাঝারি গরুর দাম বেশি হাটে এসেছি গরু কিনতে কিন্তু এখনও পছন্দমত গরু পাইনি তবে দেখি না হলে আগামী হাটে আসবো। কান্দাপাড়া হাটে আসা ক্রেতা আলহাজ্ব আব্দুস সালাম বলেন, গরু কিনেছি। কিন্তু গত বছরের চেয়ে দাম অনেকটাই বেশি।
সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের খামারি আব্দুল হাই জানান, আমার খামারে ১০ টি ষাঁড় পালন করেছি। ২০ লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে। ব্যাপারীরা এসে ১০টি গরু ১৮/২০ লাখ টাকা দাম করছে এতে লোকসানের আশংকা করছি। তিনি বলেন হাটে তুলে দেখি কত টাকা বিক্রি করা যায়। গরুর পাইকার আব্দুল জানান, গরুর দাম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কোরবানির পশু পরিবহনে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কামারখন্দ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ ও বেলকুচি উপজেলার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সড়ক পথে ট্রাক ও নছিমন-করিমনে পশু নিতে গেলে পথে পথে হয়রানি ও চাঁদা দিতে হয়। একইভাবে নৌপথেও কিছু এলাকায় অস্থায়ী পশুর হাট বসিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে পশু নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শাহজাদপুরের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদী পথে পশু নিতে গেলে মাঝপথে জোর করে নৌকা থামিয়ে পশু নামাতে বলা হয়। এতে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন অনেক ব্যবসায়ীরা।
সিরাজগঞ্জ সদরের গরু ব্যবসায়ী শিশির আহমেদ, আনোয়ার হোসেন ও মজিবর শেখ বলেন, আমাদের কড্ডা দিয়ে মহাসড়ক ছাড়া পরিবহনের বিকল্প পথ নাই। আমাদের এই মহাসড়কে অনেক সময় ডাকাতি হয়। প্রশাসনের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। আমরা সারা বছর কষ্ট করে গরু লালন-পালন করেছি, ডাকাতির কবলে পড়তে চাই না। ডাকাতের কবলে পড়লে সর্বশান্ত হয়ে যাবো। এজন্য মহাসড়কে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, গত রোজার ঈদে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কোরবানির ঈদে জেনো ডাকাতি বা চাঁদাবাজি না হয়, সে ব্যাপারে জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয় রাখব আমরা। আমাদের একাধিক টিম থাকবে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। তিনি আরও জানান, পশুবাহী যানবাহন এবং হাট কেন্দ্রিক যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জোরদার নিরাপত্তা থাকবে। সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গণপতি রায় জানান, অনুমোদিত পশুর হাট ছাড়া অন্য কোথাও অস্থায়ী হাট বসালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। কোরবানির পশু হাটগুলোতে প্রশাসনের পক্ষে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান, সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কালিয়া কান্দাপাড়া হাট ইজারাদার আকতার মন্ডল। তিনি জানান, হাটগুলিতে গরুর সুস্থতা যাচাইয়ের জন্য প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছেন ও জাল টাকা পরীক্ষার জন্য ব্যাংক প্রতিনিধি নিয়োজিত রয়েছেন।