রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর ও নওগাঁ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দেশের সর্ববৃহৎ শষ্য ও মৎস্য ভান্ডারখ্যাত বিল চলনবিল। এক বিরল প্রাকৃতিক জলসম্পদে ভরা এই বিলটি এক সময় বছরের ৯ মাস পানিতেই ডুবে থাকত। এই বিল তার বিশাল জলরাশির ঐতিহ্য হারিয়েছে। সেই সাথে বিলের তলা উন্মোচিত হয়ে সরিষা আবাদ ও মধু সংগ্রহের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে এই চলনবিল। চলনবিলের বুকজুড়ে এই রবি মৌসুমে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হচ্ছে। সেই সরিষাফুল থেকে আহরিত হচ্ছে অনন্য সম্পদ মধু। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় আড়াই হাজার টন মধু ও তিন লাখ টন সরিষা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই মধু দেশে এবং দেশের বাইরে রফতানি হচ্ছে বলে জানান মধু সংগ্রহকারীরা। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানাযায়, চলতি রবি মৌসুমে পাবনায় ৪৪ হাজার ৮৯০ হেক্টর, নাটোরে ৯ হাজার ১১৫ হেক্টর, নওগাঁয় ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ৮৭ হাজার ১২৫ হেক্টর মিলে মোট দুই লাখ এক হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন আগাম ও নাবী জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে দুই টন হিসেবে মোট চার লাখ দুই হাজার ৪৬০ টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবার। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৪১ কোটি টাকা। চলনবিলের বুক চিরে ছুটে চলা বনপাড়া-হাটিকুমরুল যমুনা সেতু সংযোগ মহাসড়কের দুই ধারে মাঠের পর মাঠ দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর থোকা থোকা হলুদ ফুলের চাদর বিছানো। সেই হলুদ ছুঁয়েছে দিগন্ত রেখায়। নয়নাভিরাম সেই সরিষা ক্ষেতের আলে আলে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌবাক্স। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মধু সংগ্রহের পাশাপাশি সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান কৃষি সংশ্লিষ্টরা। গোটা চলনবিল এখন সত্যিকার অর্থে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। মধু উৎপাদনে চলনবিল এখন নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত করে দিয়েছে। চলতি মৌসুমে গোটা বিলাঞ্চল থেকে ২৫ লাখ কেজি (আড়াই হাজার টন) মধু আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মৌচাষিরা আশা প্রকাশ করছেন। প্রতি কেজি ৪০০ টাকা হিসেবে এর বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। চলনবিলে প্রায় এক হাজার মৌচাষি মধু সংগ্রহে এসেছেন। আর এসব মৌচাষির সাথে শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছেন আরো তিন হাজার।