ePaper

সাদাপাথর লুটকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ থেকে সাদাপাথর লুটকারীদের তালিকা দাখিলের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই মাসের মধ্যে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এ তালিকা করে প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভোলাগঞ্জের লুট হওয়া সব পাথর সাত দিনের মধ্যে ফেরত এনে আগের জায়গায় ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এসব আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। এছাড়া এই সাদা পাথর লুটের ঘটনায় কী পরিমাণ আর্থিক ও পরিবেশগত ক্ষতি হয়েছে তা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন অধ্যাপকের নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ সচিব ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সাত দিনের মধ্যে ওই কমিটি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুট করে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং এ এলাকাকে সংরক্ষণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবেশ আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী ওই এলাকাকে কেন ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং যারা এই পাথর লুট করে পরিবেশের ক্ষতি করেছেন তাদের কাছ থেকে কেন ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। পরিবেশ সচিব, সিলেটের জেলা প্রশাসক, এসপি, বিজিবি, র‌্যাবসহ স্থানীয় প্রশাসনকে এসব রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে এই সাদাপাথর রুট করে নেওয়া হয়েছে, পরিবেশের ক্ষতি করা হয়েছে। আমরা যেহেতু পরিবেশ নিয়ে কাজ করি তাই আজ জনস্বার্থে রিট করি। রিট করার পর দুপুরে ওই রিটের শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। এদিকে, ভোলাগঞ্জ থেকে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে দায়ের করা আরেকটি রিটের শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। আদালতে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নূরুন নবী। বুধবার আইনজীবী নুরুন নবী রিট আবেদনটি দায়ের করেন। রিট আবেদনের সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয় এবং সেখানে যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া, সিলেটের পর্যটন এলাকা ভোলাগঞ্জ থেকে সাদাপাথর লুটের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তার ব্যাখ্যা চেয়ে একটি রুল জারিরও আবেদন করা হয়েছে রিটে। উল্লেখ্য, গত এক বছরে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ পাথর উত্তোলন করা হয়। স্থানীয় প্রশাসনের সামনে দিনদুপুরে এসব পাথর তোলা হয় এবং প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। পাথর লুটের ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *