ePaper

সাতক্ষীরা শ্যামনগর বাঁশ ও বেত শিল্প প্রায় বিলুপ্ত

রবিউল ইসলাম (সাতক্ষীরা) শ্যামনগর

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের বাঁশ ও বেত শিল্প আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। এ শিল্পের সঙ্গে যেসব শ্রমিক জড়িত তারা আজ পেশা পাল্টাতে শুর“করেছেন। এ পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকরা বর্তমান বাজারের প্লাস্টিক ও অন্য সব দ্রব্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে নির্বিকার হয়ে পড়েছেন। ফলে এ শিল্পের ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি শ্যামনগর রতনপুর কুটির শিল্পে জড়িতদের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। এক সময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামীণ পল্লিতে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙারি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খালই, পলই, খোলসন, ঝুঁড়ি ও হাঁস-মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। পুর“ষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। আর হাটবারে স্থানীয় বাজারে এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে এসব বাঁশ-বেতের পণ্য বিক্রি হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ-বেতের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ কারিগররা। গতকাল শনিবার সকালে সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্লাস্টিক সামগ্রীর কদর দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ-বেতের কুটির শিল্পের চাহিদা এখন আর নেই। তা ছাড়াও এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত এখন আর সহজলভ্য নয়। বাজারগুলো দখল করেছে প্লাস্টিক ও এ্যালুম্যানিয়াম। অনেকে আবার দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ছুটছে। তবে শত অভাব অনটনের মধ্যেও হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও পৈতৃক এই পেশাটি ধরে রেখেছেন। উপজেলার কদমতলা গ্রামের আলী হোসেন বলেন, বাপ-দাদার পেশা তাই আকড়ে ধরে আছি। ছেলেমেয়েরা এখন আর এ পেশায় কাজ করতে চায় না। এতে পরিশ্রম বেশি, লাভ কম। আগের মতো চাহিদাও নেই। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূলের দাম বেশি হওয়ায়, স্বল্প আয়ের এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজারে বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য বিক্রি করতে আসা কারিগর তারা পদ দাশ জানান, তারা নিজেরাই দীর্ঘদিন ধরে বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য হাটে গিয়ে বিক্রি করে আসছেন। অতীতে বাজার যেভাবে চলছিল তা ভালোই চলছিল। বর্তমানে বাজারে বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যে ক্রেতাদের চাহিদা কমে যাওয়া এতে তেমন কোনো লাভ হয় না। তাই জীবনধারণ করা অনেক কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঁশ-বেতে তৈরি জিনিসের স্থানীয় পাইকারী ক্রেতা আকবার আলী বলেন, এক সময় প্রত্যেক বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিস পত্রের ব্যবহার ছিল। চাহিদাও ছিল ব্যাপক। বর্তমান প্লাস্টিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *