সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরা জেলায় পান চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পান চাষ শুরু করেছেন সাতক্ষীরার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।
পান চাষে শুধু পুরুষেরা নয়, নারী-পুরুষ উভয়ই পানের বরজে কাজ করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও টানা ভারি বর্ষণে প্রতি বছরই পান চাষিদের বিপাকে পড়তে হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সাতক্ষীরায় এবার ৫৫০ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। বিগত বছর এর উৎপাদন হয়েছিল ৩ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন। কৃৃষকরা বাজারে পান বিক্রি করেন ১ পোন অর্থাৎ ৮০টি ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। আর পাইকারি বিক্রি করেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা। যখন পানের চাহিদা বেড়ে যায়, তখন কৃষকেরা ১৬০ টাকা অথবা তার বেশি দামে বিক্রি করেন।
এদিকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলায় পান চাষের ঐতিহ্য বহু পুরনো। এই অঞ্চলের মাটি, জলবায়ু এবং সেচ ব্যবস্থার জন্য পান চাষের উপযোগিতা বেড়েছে। এখানকার উর্বর মাটিতে পান চাষের মাধ্যমে স্থানীয় কৃৃষকরা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছেন। সাতক্ষীরা তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা মাগুরা গ্রামের কৃষক রবীন্দ্রনাথ বলেন, এই বরজ আমার ঠাকুর দাদার আমল থেকে। মানে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমাদের এই বরজ। এই ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ব্যবসা নেই?। আমার এখানে প্রায় ৬-৭ জন লোক নিয়মিত খাটে। প্রায় তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছি। প্রত্যেক সিজেনেই প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়। নারী শ্রমিক লক্ষ্মী সরকার বলেন, আমাদের বাড়ি মাগুরা এলাকায়। আমরা পানের বরজে কাজ করি। এই গ্রামের অধিকাংশ মহিলারাই এই পানের বরজে কাজ করে খায়। সকাল ৮ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করি। এখান থেকেই আমাদের সংসার চলে। দিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আমাদের মজুরি। শ্রমিক এছার উদ্দিন গাজী বলেন, সকাল ৮ থেকে বেলা ৪টা পর্যন্ত পানের বরজে কাজ করি। আমাদের অঞ্চলের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষই পানের বরজের কাজ করে। বরজ মালিকও প্রায় ৯০ ভাগের মত। অন্য কোন ফসল পাতি তেমন হচ্ছে না এজন্য পানের উপরই সবাই নির্ভর। আমাদের জীবন নির্ভর করছে এই কাজ থেকে। এখান থেকে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করি। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা বিভিন্ন ফসলের বৈচিত্র্যময় এখানের একটি উল্লেখযোগ্য ফসল হচ্ছে পান ফসল। আমাদের ৫৫০ সেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। কৃষকেরা এটি বিক্রি করে অর্থ পেয়ে থাকে। এবছরও পান উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হবে বলে আশা করছি।