পি. কে. বিশ্বাস
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর গতকাল বুধবার জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার : জীবন দর্শন ও সমাজ সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেমিনার ও আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ডক্টর মোহাম্মদ সেলিম রেজা। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক কবি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব (উপসচিব) মো. সাদেকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফরহাদ সিদ্দিক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কীপার আসমা ফেরদৌসি। প্রবন্ধকার তাঁর প্রবন্ধে বলেন, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার এক অগ্রগামী সমাজ সংস্কারক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর জীবন ও কর্মগ্রামবাংলার মানুষের মুক্তি, শিক্ষার প্রসার, সামাজিক ন্যায়বিচারএবং আধ্যাত্মিক জাগরণের সংগ্রামে নিবেদিত। তিনি ‘কাঙাল’ নামেপরিচিত হয়ে ওঠেন তাঁর নিঃস্বার্থ মানবসেবা, দরিদ্র-দুঃখীদের প্রতিগভীর সহানুভতি, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং তাঁর জীবন দর্শনেরউল্লেখযোগ্য দিক। তাঁর জীবন নাটকীয় বিন্যাসে রচিত। তিনি বিত্ত, বিদ্যা কিংবা কৌলীন্য কোনোটারই অধিকারী ছিলেন না। তিনিছিলেন গ্রামীণ মফস্বলের অধিবাসী, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার নিরিখেপ্রায়-অশিক্ষিত, ধন-বিত্তের বিচারে নিতান্ত হতদরিদ্র এবং বংশ-কৌলীন্যের গৌরব-বঞ্চিত। কিন্তু তিনি এসব সীমাবদ্ধতা ওপ্রতিকূলতা অতিক্রম করে নিজেকে সমকালীন সমাজে প্রতিষ্ঠিতকরেছিলেন লোককল্যাণবোধে প্রবল প্রতিজ্ঞা, সংকল্প এবং নির্ভীকসাহসী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে। তাঁর সাহস, মানবতা, বাউল-ভাবনাএবং শিক্ষা-সেবার চেতনা আমাদের এখনও প্রেরণা দেয়। বাঙালিসমাজে তাঁর অবদান যতদিন বাংলা থাকবে, ততদিন শ্রদ্ধার সঙ্গেস্মরণ করা হবে। বাংলা সাংবাদিকতা, শিক্ষা ও মানবতার পথে তাঁর অবদান আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি প্রমাণ করেছিলেন, সমাজ পরিবর্তন সম্ভব একজন নির্ভীক, নিষ্ঠাবান মানুষ দিয়েই।নবীন প্রজন্মের পাঠক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং সমাজ গঠনেনিবেদিত প্রাণশক্তি হয়ে উঠবে কাঙাল হরিনাথের মনোজগতেরকাঙ্খিত শক্তি আধার, যেখানে লুকিয়ে রয়েছে নতুন জীবন গড়ার প্রত্যয়।