মো. তাসলিম উদ্দিন, (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সরাইল
মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি আর বাড়তি জ্বালানির দামে বিপাকে পড়েন কৃষকেরা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরাইলে আমনের ফলন ভালো হয়েছে। মাঠে মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটছেন কৃষক। একই সঙ্গে চলছে ধান মাড়াই-ঝাড়াই ও শুকানোর কাজ। জমির পাশেই ধান সেদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে বাড়িতে নিতে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীরা। শুধু বাম্পার ফলনই নয়, বাজারে ধানের দামও ভালো থাকায় খুশি ঝরছে প্রতিটি কৃষকের মুখে। বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময় থেকেই গ্রাম বাংলার মাঠে মাঠে উত্তরের মৃদু বাতাসে সোনালী ধান দুলছে। উত্তরের বাতাসে পাঁকা ধানের সুমিষ্ট ঘ্রাণে মুখরিত হওয়ায় মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায় কৃষকের। সরাইলের নিম্নাঞ্চলসহ উপজেলা ৯টি ইউনিয়নে পুরোদমে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও এলাকার কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটতে আমন ক্ষেতে কাজ করছেন। পাশাপাশি শ্রমিক কৃষাণীরা ধান মাড়াইয়ের কাজ করছে। এ মৌসুমে রোপা আমন ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। ফলে উৎসব মুখর পরিবেশে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এছাড়া গরুর খাদ্য হিসেবে খড়ের চাহিদা বৃদ্ধি ও ধানের দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দিগন্তজোড়া মাঠে সবুজের মাঝে সোনালী ধানের ঝিলিক। কোথাও পাকা ধান আবার কোথাও আধাপাকা ধান। কৃষকেরা ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেইসঙ্গে কৃষাণীরাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে সাহায্য করছেন। কৃষকরা বলছেন, এবার রোপা আমন চাষে তেমন বেগ পেতে হয়নি। বেশির ভাগ এলাকায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া পোকা-মাকড়ের আক্রমণও ছিল কম। ফসল নষ্টকারী ইঁদুরের আক্রমণ ছিল শঙ্কার চেয়ে কম। সব মিলিয়ে ধান চাষে আবহাওয়া ছিল অনুকূল। তারা আরও বলছেন, ফলন বেশি হলে দাম কমে যায়। এটা কৃষকদের জন্য কষ্টকর। তবে এবার প্রথম থেকেই ধানের দাম ভালো রয়েছে। ধানের বাজার খুব একটা কমার সম্ভাবনা নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার সরাইল ৯টি ইউনিয়নে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রোপা আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। ফসলের দাম ভালো থাকায় এই বছর ধান কাটা শ্রমিকের সংকট লক্ষ্য করা যায়নি। এ বছর ধানের দামও বেশ ভাল। প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.একরাম হোসেন বলেন, উপজেলায় প্রথমদিকে বৃষ্টিপাতের কিছুটা সমস্যা থাকলেও পরে আশানুরূপ বৃষ্টিপাতের ফলে রোপা আমনের চারা রোপণে সমস্যা হয়নি। এ মৌসুমে ধান চাষে তেমন বাড়তি খরচ করতে হয়নি কৃষকদের। ফলনও ভালো হয়েছে। অন্যদিকে দামও বেশ ভালো রয়েছে। কৃষকরা লাভবান হবেন। তিনি বলেন এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে।