ePaper

শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের টি-৭১ নম্বর গেটের এলার্মের শব্দে জনজীবন বিপর্যস্ত

মো. আফজল হোসেইন, শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের টি ৭১ নম্বর গেটের এলার্মের অসহনীয় শব্দে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৬ ঘণ্টা এই এলার্মটি বেজে চলার কারণে সড়কে চলাচলকারী ও আশপাশের ব্যবসায়ীরা চরম অস্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ট্রেনের আগমন-নির্গমন সতর্ক করার জন্য স্থাপিত এই এলার্মটির শব্দ মাত্রাতিরিক্ত এবং এটি দীর্ঘ সময় ধরে বাজতে থাকে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, বয়স্কদের বিশ্রাম এবং ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুসারে বিভিন্ন এলাকার জন্য শব্দের মানমাত্রা রয়েছে নীরব এলাকা: দিনে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকা: দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকা: দিনে ৬০ ডেসিবেল এবং রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকা: দিনে ৭০ ডেসিবেল এবং রাতে ৬০ ডেসিবেল, শিল্প এলাকা: দিনে ৭৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৭০ ডেসিবেল। তবে এলার্মটির শব্দ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় স্থানীয়দের শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং কী স্বাস্থ্যঝুকিতে রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ফরিদ মিয়া জানান, গেটের কাছে স্থাপিত বিপদ সংকেত প্রদানকারী এলার্মটি মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণের সৃষ্টি করছে। এই এলার্মের ক্রমাগত এবং অসহনীয় শব্দে ক্রেতাদের সাথে কথা বলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন এই উচ্চমাত্রার শব্দ শোনার কারণে তিনি এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীরা মারাত্মক মাথা ব্যথায় ভুগছেন। অনুমান করা হচ্ছে, এলার্মটির শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবলেরও বেশি, যা ক্রমাগতভাবে বাজতে থাকে। গেটের খুব কাছেই তার দোকান হওয়ায়, এই অসহনীয় শব্দের কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না। দিনের শেষে বাসায় ফিরেও তিনি মাথা ঝিমঝিম করার সমস্যায় ভুগছেন। তিনি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন, বিকল্প কোনো সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। এলাকার বাসিন্দা মো. এরশাদ মিয়া জানান, আমার বাসা ও দোকান এলার্মটির খুব কাছাকাছি ফলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে বাসায় বিশ্রাম নিতে গেলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এলার্মটির উচ্চে শব্দে মাথা ভোঁ ভোঁ করে এছাড়াও সারাক্ষণ বেজে থাকায় এখানে বসবাস করাটা এক প্রকার অসহনীয় পড়ছে। এত উচ্চমাত্রার এলার্ম থাকা সত্ত্বেও গেটে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই এই এলার্মের কার্যকারিতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি এমন একটি সমাধান চান, যা একই সাথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য সহনীয় হবে। উচ্চ শব্দ বন্ধ ও অন্য ভাবে সংকেত ব্যবহার করার জন্য তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান। এছাড়াও একাধিক ব্যক্তিরা অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান চেয়েছেন। তারা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে এলার্মের শব্দ কমানো বা এটি বন্ধ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। উচ্চ শব্দ মানবদেহে কি ধরনের স্বাস্থ্যঝুকি তৈরি করতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সিনথিয়া তাসমিন বলেন, শ্রবণশক্তি হ্রাস ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন ব্যাহত হয়। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগসহ মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটতে পারে। ক্ষুধামান্দ্য ও মানসিকচাপসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয়। মনোযোগসহ কাজে মনসংযোগ ব্যাহত হয়। কর্মদক্ষতা ও কাজের গুণগত মান হ্রাস পায়। অনিদ্রা ও স্মরণশক্তি হ্রাস পায়। রেলওয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে, শ্রীমঙ্গল স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অ্যালার্মটি চালু রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, অ্যালার্মটি ৭০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ করছে। এ বিষয়ে স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই, তবে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *