ePaper

শেয়ারবাজারে বড় দর পতন এক দিনে কমলাে ৮০ পয়েন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক সমস্যা  কাটতে না কাটতেই আরেক সমস্যা হাজির হচ্ছে শেয়ারবাজারে। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে দর পতন। দীর্ঘ পতন শেষে গত জুন থেকে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ শেষ না হতেই ফের পতনের ধারায় ফিরে যায়, যা গত কয়েকদিনে নতুন মাত্রা পেয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার শেয়ারবাজারে বড় পতন হয়েছে। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৩০৩টিই দর হারিয়েছে।  বেড়েছে মাত্র ৩১টির দর। অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির। একই চিত্র ছিল মিউচুয়াল ফান্ড খাতে। তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি ফান্ডের মধ্যে কেবল একটির দর বেড়েছে, কমেছে ২৩টির।

সিংহভাগ শেয়ার দর হারানোয় গতকাল প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৮০ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১১৬ পয়েন্টে নেমেছে। গত ৬ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৩১ পয়েন্ট বা ৬ শতাংশ হারিয়েছে এ সূচক। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে যেখানে এক দিনে প্রায় ১৪৫০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল, গতকাল তা ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, গত ৬ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত আট কর্মদিবসে ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ৩২৬টি বা ৯০ শতাংশের বেশি শেয়ার দর হারিয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশ দর হারিয়েছে ১৪৫ কোম্পানির শেয়ার। বিপরীতে মাত্র ৭ কোম্পানির শেয়ারের দর ১০ থেকে ২৬ শতাংশ বেড়েছে।

দর পতন নতুন করে উদ্বিগ্ন করছে বিনিয়োগকারীদের। শেয়ারদরের সঙ্গে লেনদেন বাড়তে দেখে অনেক বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট হয়েছিলেন নতুন করে বিনিয়োগে। কিন্তু গত প্রায় সোয়া মাসের দর পতনে তারা নতুন করে ক্ষতির মুখে।

এ নিয়ে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। চলতি দর পতনের জন্য রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্ট অস্থিরতার প্রভাবকে বড় করে দেখছেন অনেকে। এর সঙ্গে শেয়ারবাজার সংস্কার সংক্রান্ত কিছু ইস্যুও কিছু বড় বিনিয়োগকারীর মধ্যে অস্বস্তি আছে। বিশেষত মার্জিন ঋণ ইস্যু নিয়ে অস্বস্তি বেশি। এর পাশাপাশি জুনে আর্থিক হিসাব শেষ হয় এমন কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে নেতিবাচক ধারার আশঙ্কায় কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার নীতি নিয়েছেন। ফলে চাহিদা কমে উল্টো বিক্রির চাপ বেড়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে তালিকাভুক্ত ২৪৫ কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ধারণের হার কমপক্ষে ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে ১৫৪ কোম্পানি থেকে। বিপরীতে ১ শতাংশীয় পয়েন্ট পর্যন্ত শেয়ার ধারণের হার বেড়েছে ২৩ কোম্পানিতে।একই ধারা দেখা গেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের হারে। গত মাসে ৩৯ কোম্পানি থেকে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। এর মধ্যে অন্তত এক কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে ১৭ কোম্পানি থেকে। যেখানে ১৭ কোম্পানিতে কম-বেশি বিদেশিদের বিনিয়োগ বাড়লেও এক কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ বেড়েছে চার কোম্পানিতে।

জানতে চাইলে অন্যতম প্রধান ব্রোকারেজ হাউস প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনে করেন, এসব কারণের একটি কারণই শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী ধারা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। যদি সবগুলো একত্রে প্রভাব থাকে, তাহলে পরিস্থিতি বেশি নাজুক হওয়ার শঙ্কা বেশি। তিনি সমকালকে বলেন, গত মাসের প্রাতিষ্ঠানিক বা বিদেশি বিনিয়োগ কমার প্রবণতাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, বড় বিনিয়োগকারীরা কোনো না কোনো বিষয়ে সতর্ক। এরাই এক সময় ক্রেতা ছিল, যারা শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এখন তারা বিক্রেতার ভূমিকায় থাকলে স্বাভাবিকভাবেই দর পতন হওয়ার কথা।

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের কে কোন বিষয়ে বেশি উদ্বিগ্ন, তার পরিসংখ্যান বের করা অসম্ভব। যেমন– গত কয়েকদিন ধরে মার্জিন ঋণ বিধিমালার পরিবর্তন নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে। আর রাজনৈতিক ইস্যু সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। আরও একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধনে বিলম্ব করে দর পতনকে দীর্ঘায়িত করছে কমিশন। এটা দ্রুত শেষ করা দরকার। ধারণা করা হচ্ছে, সংশোধিত বিধিমালার কারণে বাজারে তারল্য প্রবাহ কমবে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার মার্জিন ঋণের অযোগ্য হবে। ফলে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থান নেওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *