পি কে বিশ্বাস
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মোসলেম আলী স্মরণে গতকাল বুধবার জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতিতে অধ্যাপক মোসলেম আলী’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভা আয়োজন করে। সেমিনার ও আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রদর্শক প্রভাষক মো. সোহেল মাসুদ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলী এবং নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের উপ-কীপার সাইদ সামসুল করীম। প্রবন্ধকার তাঁর প্রবন্ধে বলেন, কিংবদন্তি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোসলেম আলী ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ সালে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার জোড়মল্লিকা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে এস.এস.সি. এবং রাজশাহী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. পাশ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্মাতক সম্মান ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা সার্ভিস কমিশন কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তাঁর কর্মদক্ষতা তাঁকে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। সময়ের সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্যের খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি একাধারে সুনামের সাথে সাতটি কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৯২ সালে তাঁকে প্রশাসন ক্যাডারে অর্ন্তভুক্ত করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব পদে নিয়োগ দেন। এই পদে কর্মকালে তাঁর ইতিবাচক ভাবমূর্তি ও খ্যাতি আরও বিস্তৃত হয়। এরপর তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এভাবেই তিনি নিজ সফলতায় ভরপুর বর্নাঢ্য কর্মময় জীবনে অসামান্য প্রতিভা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে সক্ষম হন। তাঁর সারা জীবনের কর্মময় জীবনই তাঁর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। জীবনব্যাপী কর্মকালে তিনি সরকারিভাবে ইরান, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর দীর্ঘ জীবনের কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের গণমানুষের উন্নয়নের জন্য ও মানুষের আত্মিক বিকাশের জন্য নিবেদন করেছিলেন। এই কিংবদন্তী মানুষটি ১৬ এপ্রিল ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। একজন শিক্ষক আমৃত্যু শিক্ষক এবং মৃত্যুর পরও তাঁর আদর্শ অনুসরন ও অনুকরণ করে আমরা তাঁর প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অন্যের মধ্যে সঞ্চালন করতে পারি। তবেই তাঁর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং সূর্যের আলোক রশ্মির মত তাঁর জ্ঞান ও আদর্শের আলো যথাযথভাবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারব। তাঁর কর্মের মাধ্যমেই তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন চিরকাল।