লালমনিরহাটে দেখা দিয়েছে গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ

লিয়াকত আলী, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটে দেখা দিয়েছে গবাদি পশু গরুর ল্যাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। লাম্পি স্কিন রোগে মৃত্যুহার কম হলেও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে দুগ্ধ ও চামড়া শিল্পে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পশুর চামড়া অনেকটাই অকার্যকর হয়ে যায়। ল্যাম্পি স্কিন রোগের কারণে খামারিদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। গত কয়েক দিন থেকে ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে। জানা যায়, ল্যাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গরু সুস্থ হতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। দিন দিন গরু-বাছুর দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মারাও যায়। একটি খামারকে অর্থনৈতিকভাবে ধসিয়ে দিতে খুরা রোগের চেয়েও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর রোগ লাম্পি স্কিন এলএসডি। বর্তমান সময়ে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। এ ভাইরাসটি চড়ীারৎরফধব পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ঈধঢ়ৎরঢ়ড়ী ারৎঁং গণের ভাইরাস। ছাগল ও ভেড়ার পক্স ভাইরাসের সাথে এ ভাইরাসের খুবই সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এ ভাইরাস গরু ছাড়া মহিষেও ছড়াতে পারে। এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে আক্রান্ত হয় গরু সাধারণত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে বা বসন্তের শুরুতে। এ রোগের লক্ষন হিসেবে জানা যায়, আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়। জ্বরের সাথে সাথে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়, দুই পায়ের মাঝে পানি জমে যায়। পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়। আর এ ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত হতে পরে। শরীরের কোথাও কোথাও ফুলে যায়। যা ফেটে টুকরা মাংসের মতো বের হয়ে ক্ষত হয় এবং পুঁজ বের হয়। এ রোগে আক্রান্ত গরু বিভিন্ন উপায়ে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো মশা ও মাছির আক্রমণ। মশা ও মাছিকে এ ভাইরাসের প্রধান বাহক হিসেবে দায়ী করা হয়। আক্রান্ত গরুর লালা গরুর খাবারের মাধ্যমে এবং খামার পরিচর্যাকারী ব্যক্তির কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত গাভির দুধেও এ ভাইরাস বিদ্যমান। তাই আক্রান্ত গাভীর দুধ খেয়ে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে। গ্রাম-গঞ্জের প্রাণি চিকিৎসকরা এক সিরিঞ্জ ব্যবহার করে বিভিন্ন গরু-ছাগলকে টিকা দেন। এতেও সিরিঞ্জের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসে আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন প্রজননে ব্যবহার করলেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। কেবল গরু, মহিষ ও ছাগল লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। আবার গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। জেলার দুধ উৎপাদনকারী খামারগুলোয় এ রোগের প্রভাব পড়ছে। দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা। গরুর লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়লেও এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, খুব সাধারণ চিকিৎসায় গবাদি পশুর এই রোগ সারানো সম্ভব। সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। লাম্পি স্কিন রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। খামারিরা বলছেন, গরু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে এই লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে খামারকে মুক্ত রাখা না গেলে এই অগ্রযাত্রায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা। লাম্পি স্কিন ডিজিজ গরুর জন্য একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাস জনিত চর্মরোগ, যা খামারের ক্ষতির কারণ। দ্রুত রোগটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে প্রাণিসম্পদ খাত। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা  জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলায় ল্যাম্পি স্কিন এলএসডি রোগে গরু আক্রান্ত হয়েছে সীমিত আকারে। আক্রান্ত গরুকে সঠিক ভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। বেশি আক্রান্ত যেনো না হয় সে বিষয়ে খামারিদের বিভিন্ন উপদেশ দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *