লিটনের আরেকটি শূন্য যোগ হলো তার হতাশার তালিকায়। চলমান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে আজ তৃতীয় ম্যাচে দুই বলে শূন্য রানে আউট হয়েছেন লিটন দাস। এর মাধ্যমে ২০২৪ সালে ৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে তিনি তৃতীয়বারের মতো শূন্য রানে আউট হলেন। ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।
ছবিটি যেন সব বলছে—আউট হয়ে মাঠ ছাড়ছেন লিটন। একজন সমর্থকের ফেসবুক পোস্টে ব্যঙ্গাত্মক ক্যাপশন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বাদশ খেলোয়াড়’! লিটনের ব্যাটে রান না আসায় প্রতিপক্ষের সুবিধা বাড়ছে, আর বাংলাদেশের সমর্থকরা হতাশ।
লিটনের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে লিটন করেছিলেন মাত্র ৭ বলে ২ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৯ বলে ৪। আর আজ তৃতীয় ওয়ানডেতে আউট হয়েছেন ২ বলে শূন্য রানে। আলজারি জোসেফের অফ স্টাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন উইকেটকিপারের হাতে।
শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নয়, ২০২৪ সালে লিটনের ব্যাটিং পারফরম্যান্স উদ্বেগজনক। বছরের পাঁচটি ওয়ানডেতে তিনবার শূন্য রানে আউট হয়েছেন। এর আগে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে দুই ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হন তিনি।
অতীত পরিসংখ্যান আরও হতাশাজনক। সর্বশেষ সাতটি ওয়ানডে ইনিংসের মধ্যে তিনি মাত্র একবার দুই অঙ্কের স্কোরে পৌঁছেছেন। রানখরার এই সময়টাতে লিটনের রানসংখ্যা তার ভক্তদের মন ভাঙছে।
শূন্য রানে আউট হওয়ার পরিসংখ্যান
লিটনের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ১৫তম শূন্য। বাংলাদেশের হয়ে এর চেয়ে বেশি শূন্য রানে আউট হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে কেবল তামিম ইকবাল (১৯ বার) এবং হাবিবুল বাশারের (১৮ বার)। তবে তামিম ও বাশার লিটনের চেয়ে অনেক বেশি ম্যাচ খেলেছেন।
এছাড়া মোহাম্মদ রফিক এবং মাশরাফি বিন মুর্তজাও ১৫ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন। তবে তারা মূলত বোলার। বিপরীতে, লিটন একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাটার হিসেবে খেলেন এবং মাত্র ৯৩ ইনিংসে এত বেশি শূন্য রানে আউট হওয়ার বিব্রতকর রেকর্ড করেছেন।
অন্যান্য ক্রিকেটারের তুলনায় লিটন
২০২৪ সালে ওয়ানডেতে তিনটি শূন্য রানে আউট হওয়ার তালিকায় লিটনের মতো অবস্থায় আছেন জিম্বাবুয়ের ব্লেসিং মুজারাবানি, শ্রীলঙ্কার আভিস্কার ফার্নান্দো এবং নেদারল্যান্ডসের মাইকেল লেভিট। তবে এঁদের সবাই লিটনের চেয়ে বেশি ইনিংস খেলেছেন।
চলতি বছর সর্বোচ্চ শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জুনায়েদ সিদ্দিকীর। তিনি ১০ ইনিংসে ৫ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন। লিটন দ্বিতীয় স্থানে আছেন, তবে তার ব্যাটিং অবস্থান এবং দলের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে এই ব্যর্থতা আরও বেশি চোখে পড়ছে।
লিটনের ব্যর্থতার কারণ
লিটনের এই ধারাবাহিক ব্যর্থতার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। মানসিক চাপ, ফর্মহীনতা, এবং প্রতিপক্ষের পরিকল্পিত বোলিং তার দুর্বলতার জন্য দায়ী হতে পারে। এছাড়া দীর্ঘ ইনজুরি এবং অসুস্থতা থেকেও তিনি সম্প্রতি সেরে উঠেছেন, যা তার পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ এবং নির্বাচকরা এখন লিটনের এই রানখরা কাটিয়ে উঠার জন্য কৌশল নির্ধারণ করবেন। তাকে হয়তো বিশ্রাম দিয়ে আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
ভবিষ্যতের করণীয়
লিটন দাসের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটারের জন্য এ সময়টা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তবে তার সামর্থ্য নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। ক্রিকেট বোর্ড এবং টিম ম্যানেজমেন্টের উচিত তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা এবং রানখরা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা। লিটনের ফর্ম ফিরে আসা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আসন্ন আন্তর্জাতিক সিরিজ এবং বিশ্বকাপের আগে।
উপসংহার:
লিটনের আরেকটি শূন্য শুধু পরিসংখ্যান নয়, ভক্তদের হতাশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তিনি তার ব্যাটিং ফর্ম ফিরে পেলে দল এবং তার নিজস্ব ক্যারিয়ার দুটোর জন্যই সেটা ইতিবাচক হবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আশা করছেন, লিটন দাস শিগগিরই তার হারানো ছন্দ ফিরে পাবেন।
আরও ক্রিকেটের খবর: check here
Share Now