রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী—বাংলাদেশের আর্চারি দুনিয়ার আলোচিত নাম। খেলতে খেলতেই প্রেম, এরপর বিয়ে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তারকা দম্পতি হয়ে ওঠেন তাঁরা। তবে এখন তাঁরা উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। রাজধানী ঢাকার নিউ জার্সিতে অবস্থান করছেন এই দুই তারকা। তাঁদের হঠাৎ দেশ ছাড়ার খবর দেশের আর্চারি মহলে আলোড়ন তুলেছে।
কেন দেশ ছাড়লেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী?
বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন তাঁদের হঠাৎ চলে যাওয়ার বিষয়ে কোনো পূর্বাভাস পায়নি। দিয়ার বাবা দাবি করেছেন, চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন তাঁর মেয়ে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২০২১ সালে আর্চারির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিল বাংলাদেশ আর্চারি দল। সেই সফরের সময় পাঁচ বছরের ভিসা পান দলের খেলোয়াড়রা। সেই ভিসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন আর্চার অসীম কুমার ও আবদুল হাকিম রুবেল। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন রোমান ও দিয়া।
দেশের জন্য বড় ক্ষতি
রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকীর দেশ ছাড়ার ঘটনা বাংলাদেশের আর্চারি ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বড় ক্ষতি বলে মনে করেন বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘অনেক পরিশ্রমের বিনিময়ে একজন খেলোয়াড় তৈরি হয়। রোমান ও দিয়ার চলে যাওয়া তরুণ খেলোয়াড়দের কাছে ভুল বার্তা দিতে পারে।’
খেলাধুলায় অবহেলার সংস্কৃতি
বাংলাদেশে ক্রীড়াবিদদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সম্মানের অভাবের কারণে অনেকেই বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হন। সাবেক ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন এলিনা সুলতানা বলেন, ‘দেশে ভালো খেলোয়াড়দের কোনো মূল্য নেই। আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া খেলোয়াড়েরা খেলায় সময় দিতে চান না।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রোমান সানা জাতীয় দলে ফেরার জন্য কিছুদিন আগে আবেদন করেছিলেন। তবে সেই সুযোগ নেওয়ার আগেই তিনি ও দিয়া দেশ ছাড়েন। আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ওরা আমাদের দোয়া নিয়ে গেছে। এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমরা তাঁদের জন্য শুভকামনা জানাই।’
খেলোয়াড়দের বিদেশযাত্রার কারণ
বাংলাদেশের অনেক খেলোয়াড় তাঁদের ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে চলে যান। বিশেষ করে আর্থিক নিরাপত্তার অভাব এবং ক্রীড়া ফেডারেশনের উদাসীনতা তাঁদের দেশ ছাড়তে প্রভাবিত করে।
ভবিষ্যতের জন্য বার্তা
রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকীর দেশ ত্যাগ একটি বড় বার্তা দেয়—বাংলাদেশে ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। খেলোয়াড়দের আর্থিক নিরাপত্তা, সামাজিক স্বীকৃতি এবং সম্মানের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই দুই তারকা আর্চার শুধু দেশের জন্য গর্বের নয়, তাঁদের চলে যাওয়া দেশের ক্রীড়া উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর নতুন করে আলোকপাত করে।
Share Now