মো. শাহজাহান মিয়া (নারায়ণগঞ্জ) রূপগঞ্জ
সাম্প্রতিক কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে রূপগঞ্জের নিম্নাঞ্চলগুলোতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, বিশেষ করে ভুলতা, মুড়াপাড়া, গোলাকান্দাইল, তারাবো এবং কাঞ্চন পৌর এলাকার প্রায় লাখো মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। জলাবদ্ধতার এই পরিস্থিতির বড় একটি কারণ হলো পানি নিষ্কাশনের খালে বর্জ্য ফেলা এবং সেখানকার ভরাট হয়ে যাওয়া। নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্গত এলাকায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে রূপগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এই সমস্যা নিরসনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে তিনি বিভিন্ন স্থানে পাম্প বসিয়েছেন এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, রূপগঞ্জে নির্মিত সেচ প্রকল্প ও পানির খালগুলোর দখল হতে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। ফলে স্থানীয় মানুষজন প্রচন্ড দুর্ভোগে পড়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকাÑযেমন তারাব, বরপা, গোলাকান্দাইল, বাগ মোড়চা, ইসলামবাগ এবং কালীসহ আশপাশের অনেক এলাকা এখন পানির নিচে ডুবে রয়েছে। অনেক বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে এবং রাস্তাগুলো হাঁটু সমান পানি দিয়ে তলিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক মানুষ নিরাপত্তার জন্য আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, আবার কেউ কেউ বাঁশের মাচার ওপর বসবাস করছে। প্রবাহিত রাসায়নিক ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে বেশ কিছু শিল্পকারখানার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিও মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। জানা যায়, ১৯৮৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রনী সেচ প্রকল্পের আওতায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেচ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু নির্মাণের পর থেকেই জলাবদ্ধতার সমস্যা শুরু হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে এবং গত ১১ মাসে ৮টি খাল পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক রাকিবুল আলম রাজিব বলেছেন, রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো অধিকাংশ খাল দখল হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে তারাব পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের খালগুলো নানা শিল্প গ্রুপের দখলে রয়েছে, যা পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই সংকট মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন, তবে দ্রুত সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
