ePaper

রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের আত্নসাৎকৃত অর্থ ফেরত দিয়ে ধামাচাপার চেষ্টা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর শিল্পী খাতুন এবং জীপগাড়ির চালক মো. মজিবর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৬ জুলাই সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন। দুই কর্মচারীর বেতন-ভাতার ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে উঠার পর অপরাধ স্বীকার করে আত্মসাৎকৃত ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন শিল্পী খাতুন। তবে বাকি টাকা এখনও ফেরত দেওয়া হয়নি। ইউএনও’র প্রদানকৃত অভিযোগনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিশে বলেন, শিল্পী খাতুন ও মজিবর রহমান মোল্লা একে অপরের যোগসাজশে চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তসরুফ বা প্রতারণা কার্যক্রম করে আসছেন। জুলাই মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখেন, তিনি বিভিন্ন সময়ে নোট, ফিল রেজিস্টার ও চেক স্বাক্ষর না করলেও শিল্পী খাতুন ও মজিবর রহমান মোল্লা চেক জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন অংকের টাকা স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন। তারা ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে চলতি মাসের ৭ জুলাই পর্যন্ত ৫টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে মোট ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩০ টাকা আত্মসাত করেছেন। এ ব্যাপারে কেন তারা, উপজেলা পরিষদ কর্মচারী (চাকুরি) বিধিমালা, ২০১০ সপ্তম অধ্যায়ের ধারা ৩৩ এর চ) অনুসারে চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তসরুফ বা প্রতারণার দায়ে দোষী হবেন না এবং কেন তাদের বিরুদ্ধে ধারা ৩৪ (আ) অনুযায়ী গুরুদণ্ড প্রদান করা হবে না তার বিষয়ে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত ভাবে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য বলা হয়। এছাড়া আত্মসাতকৃত সমুদয় অর্থ আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের বেতনভাতা শিরোনামে চলতি হিসাব নম্বরে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। জিপগাড়ি চালক মজিবর রহমান মোল্লা অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমার বেতনের অ্যাকাউন্টে ৫ দফায় মোট ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯০০ টাকা এসেছে। আমার অ্যাকউন্টে টাকা আসার পর শিল্পী খাতুনকে টাকাগুলো উত্তোলন করে তাকে দিতে বলে। উত্তোলনকৃত টাকাগুলো তাকে দেই। গত ১৩ জুলাই ইউএনও স্যার আমাকে ডেকে টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। আমি স্যারকে বলি আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছিল, আমি টাকা তুলে শিল্পীকে দিয়েছি। তখন ইউএনও স্যার শিল্পীকে ডাকলে শিল্পী স্যারের পাঁ জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে বলে যে তার ভুল হয়েছে। স্যারের পাঁ ধরে সে মাফও চায়। আমার কোন দোষ নেই। আমি এখন ফাঁসছি। রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদে শিল্পীর অফিস কক্ষে গিয়ে তাকে দেখা যায়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে, তার স্বামী বলেন, এরই মধ্যে ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ইউএনও স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের বেতনভাতা শিরোনামে চলতি হিসাব নম্বরে জমা দিয়ে দিয়েছি। রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক বলেন, এ অর্থবছরের শেষের দিকে আমি অফিসের কিছু কাগজপত্রে বিচ্যুতি লক্ষ্য করি। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে যে বা যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত শেষে আপনাদেরও (সাংবাদিকদের) জানানো হবে। উল্লেখ্য, জীপ গাড়ির চালক মো. মজিবর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স কম দেখিয়ে এবং জাল কাগজপত্র দিয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের গাড়ি চালক পদে নিয়োগ প্রাপ্তির গুরুতর অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে রয়েছে। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুর্ণীতি ও অনিয়ম করে কেউ রেহাই পাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *