রিজু সরকার, বিশেষ প্রতিনিধি
উত্তরের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার গ্রহণের প্রাণ কেন্দ্র বিভাগীয় শহর রংপুর। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে রংপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচিত হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে ছিল অবহেলিত। দেশে অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখলেও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের জন্য বরাদ্দ দেননি পতিত আওয়ামী সরকার। রংপুর নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে সাতমাথা যাওয়ার রাস্তার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে শত শত গর্ত। এই রাস্তা দিয়ে কাউনিয়া, পীরগাছা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ রংপুর শহরে যাতায়াত করে। জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে সাতমাথা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক শত ছোট-বড় গর্ত, উঠে গেছে কার্পেটিং। এতে চলাচলেভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন যানের চালক ও যাত্রীদের। একই অবস্থা হয়েছে রংপুর সিটিকর্পোরেশনের অন্যান্য সড়কগুলোতেও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় যানবাহনের ক্ষতি তোহয়ই, দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বাড়ে, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করা না হলে নাগরিক ক্ষোভ আরও বাড়বে। রসিক সূত্রে জানা যায়, রংপুর সিটি কর্পোরেশনে সড়কপথ রয়েছে ১ হাজার ৪৫৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৯৫৩ কিলোমিটার পাকা ও ৫০৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। ৯৫৩ কিলোমিটার পাকা সড়কের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার অংশ ভাঙাচোরা। সেই হিসেবে পাকা সড়কের এক-তৃতীয়াংশই বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী। খানাখন্দে ভরা এসব রাস্তায় প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। দীর্ঘদিনেও সংস্কার না করায় এমন অবস্থারসৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন নগরবাসী। মহানগরীর জাহাজ কোম্পানি থেকে সাতমাথা, সিগারেট কোম্পানি থেকে হাই-টেক পার্ক, চারমাথা থেকে ইসলামপুর, তিনমাথা, স্টেশন রোড, নিউ জুম্মাপাড়া, কুকরুল, মিস্ত্রিপাড়া, বাবুপাড়া রোড, এরশাদ মোড়, হাজীরহাট, তাজহাট, মাহিগঞ্জ এলাকা দেখা যায়, সড়কের মাঝখানে বড় বড় গর্ত। কোথাও কোথাও পুরো সড়কেরই পিচ ওখোয়া উঠে গেছে। সড়কে সৃষ্টি হওয়া গর্তে পানি জমে যেন ছোট খালে পরিণত হয়েছে। নগরীর তিনমাথা এলাকার মোনালী রায় বলেন, প্রতিদিন আমার মেয়েকে এই সড়ক (জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে সাতমাথা) দিয়ে রিক্সায় করে স্কুলে নিতে যাওয়া-আসা করা লাগে। কিন্তু রাস্তার অবস্থা এমন খারাপ যে, প্রতিবার মনে হয় রিক্সা উল্টে যাবে। বৃষ্টি হলে তো আর চলাচলই করা যায় না। মাহিগঞ্জ এলাকার ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালক এমদাদুল হক বলেন, একেকটি গর্ত খালের সমান। এই রাস্তা দিয়ে দিনে ১০ বার যাই, প্রতিবারই মনে হয় গাড়ি উল্টে যাবে। রাস্তাঘাট ঠিকনা থাকলে আমাদের ক্ষতি হয়, যাত্রীও কমে যায়। রিক্সা চালক আমজাদ হোসেন বলেন, এক গর্ত শেষ নাহতেই আরেকটা শুরু হয়। এসব রাস্তা দিয়ে গেলে রিক্সা চাকা ভেঙে যায়, যাত্রীও পড়ে যায়। প্রতিদিনকারও না কারও গাড়ি উল্টে থাকে। সিগারেট কোম্পানি থেকে হাই-টেক পার্ক যাওয়ার সড়কটিপুরো অংশের পিচ-খোয়া উঠে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। স্কুলশিক্ষক ইয়াসিন আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। হেঁটে যাওয়ার মতো উপযোগী নয়, কিন্তুসড়ক সংস্কারে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ওই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী বাহারকাচনা এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন রিক্সা উল্টে যাচ্ছে। সড়কের গর্তে পড়ে আনেকেই হাত-পাভেঙে গেছে। সড়কটি সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কলেজ শিক্ষার্থী আফসানা আফরোজ বলেন, রংপুর বিভাগীয় শহর, সিটি কর্পোরেশন, কিন্তু রাস্তা দেখে মনে হয় শহরে না, যেন কোনোগ্রামে চলছি। শহরের থেকে ইউনিয়নের রাস্তাঘাট অনেক ভালো রয়েছে। শহরে ভাঙাচোরা রাস্তার জন্যপ্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজম আলী বলেন, সিটি এলাকায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরে গেছে। এগুলো জরিপ করে রুটিন মেইনটেন্যান্সের আওতায় আনার জন্য ২১০ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মানুষের ভোগান্তিহচ্ছে। কিন্তু বরাদ্দ না পেলে কিছুই করতে পারি না। তবুও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে চিহ্নিত করে অস্থায়ীভাবে মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।